ঢাকা, পূর্বাচল—মাসব্যাপী ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ-২০২৫) আজ বুধবার উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের মেলার বর্ষপণ্য হিসেবে আসবাবকে ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান।
১৯৯৫ সাল থেকে দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এটি চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মেলার যৌথ আয়োজক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
এবারের মেলায় মোট ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের এবং ১১টি স্টল ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং মালয়েশিয়ার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "নতুন পণ্য রপ্তানিতে অন্তর্ভুক্ত করা, পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে এই মেলার আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের কার্যক্রমের ফলে তৈরি পোশাক বিশ্ববাজারে নেতৃস্থানীয় অবস্থান তৈরি করেছে।" তিনি আরও বলেন, "রপ্তানি বাণিজ্য দেশের অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।"
সেবা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "সেরা উদ্যোক্তা নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি প্রদান জরুরি। এতে দেশের সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তারা আরও উৎসাহিত হবেন।"
অধ্যাপক ইউনূস বিশেষভাবে তরুণদের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, "মেলার একটি অংশ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করা উচিত। সেখানে ২৫ বছরের নিচে উদ্যোক্তারা তাঁদের কাজ উপস্থাপন করবেন। উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃষ্টিশীল কার্যক্রমকে তুলে ধরার জন্য এ মেলা একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম।"
তরুণ উদ্যোক্তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, "জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরা উদ্যোক্তাদের মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এর খরচ সরকার বহন করবে।"
মেলার মাধ্যমে পরিবারের জন্য সারা বছরের কেনাকাটার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, "অনেকে সারা বছরের কিছু কেনাকাটা মেলার জন্য তুলে রাখেন। এটি আমার কাছে আনন্দদায়ক এবং বিস্ময়কর বিষয়।"
তিনি আরও বলেন, "মেলার উদ্দেশ্য শুধু পণ্য প্রদর্শন নয়; এটি মানুষের মনোজগতে প্রভাব ফেলার একটি সুযোগ। তরুণ-তরুণীদের মনের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার উদ্দীপনা জাগাতে হবে।"
মাসব্যাপী এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাঁদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
মেলায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "দেশের তরুণদের উদ্ভাবনী কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করার জন্য এ মেলাকে একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।"