বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের বিতর্কিত ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত ‘আয়নাঘর’ সরেজমিনে পরিদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে গণমাধ্যম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, ‘আয়নাঘরে’ গণমাধ্যমকর্মীদের পরিদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হবে। সেখানে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখতে পাবেন কীভাবে বিগত সরকার নিরীহ মানুষকে দিনের পর দিন আটকে রেখে অত্যাচার করেছিল।
ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, বন্দিদের অনেকেই ‘আয়নাঘরে’ দিনের পর দিন আটক থাকার কথা বন্দিশালার দেয়ালে লিখে রেখেছেন।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকর্মীরা যখন সেখানে যাবেন, তখন তারা নিজের চোখে দেখতে পাবেন কী ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হতো। আমরা চাই, জনগণের সামনে সত্য উদ্ঘাটিত হোক।”
অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিগত সরকারের অপকর্ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করতে চায়। তাই ‘আয়নাঘর’ গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরাও চাইলে এই টর্চার সেল পরিদর্শন করতে পারবেন। এতে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এই টর্চার সেলটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক বিরোধীদের আটক করে নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেখানে গোপন কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।
অনেক বন্দি দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করেছেন, কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যান, আবার কেউ কেউ কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও গুরুতর শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
বিগত সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেরও নজরে এসেছে। এর আগে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও বিদেশি কূটনীতিকরা এই ‘আয়নাঘর’ নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন।
প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, “আমরা চাই জনগণ সত্য জানুক। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আয়নাঘরের ভেতরের বাস্তব চিত্র জনগণের সামনে আসবে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পরিষ্কার হবে।”
গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়সূচি শিগগিরই জানানো হবে। এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হবে।