যুদ্ধের দৃঢ় মনোবল, প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং যুদ্ধের দক্ষতার অভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বারবার পরাজিত হচ্ছে। সম্প্রতি আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও কিয়াও থেট মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা নিয়ে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও কিয়াও থেট মিয়ানমারের 'লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ৯৯' এর অধীনে গঠিত এবং মান্দালয়ের ইয়ামেথিন শহরে অবস্থিত 'স্ট্র্যাটেজিক টিম ৯৯২' এর অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ও তার ৩৬০ জনের বেশি সৈন্য গত ৩১ জানুয়ারি মাগওয়ে অঞ্চলের এনগাপে টাউনশিপে আরাকান আর্মির কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও কিয়াও থেট বলেন, “আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ দুর্বল, সৈন্যদের লড়াইয়ের মনোভাব কম, এবং যুদ্ধ করার দক্ষতা নেই। দৃঢ় মনোবলের অভাবে সেনাবাহিনী শুধু আরাকান আর্মির কাছেই নয়, বরং সব যুদ্ধে, সব জায়গায় পরাজিত হবে।”
সেনাদের প্রশিক্ষণ শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও কিয়াও থেটের নেতৃত্বে 'স্ট্র্যাটেজিক টিম ৯৯২' রাখাইন রাজ্যের অ্যান টাউনশিপের সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর দুই দিন পর আরাকান আর্মির বাহিনী আকস্মিক আক্রমণ চালায়। প্রথমিক সংঘর্ষে সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। টানা সংঘর্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ১০০ সৈন্য হারায়, শতাধিক আহত হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল কিয়াও কিয়াও থেট জানান, “৩১ জানুয়ারি গোটা সি ইয়ো গ্রামে আমাদের বাহিনী পিছু হটতে গিয়ে নিজেদের কামানের গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আমি আহত হই এবং সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।”
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ২০ জন সৈন্যের একটি ছোট দল নিয়ে কিয়াও কিয়াও থেট শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণে রাজি হন।
আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতীকে নিশ্চিত করেছেন, “ভিডিওটি প্রাথমিকভাবে 'খিট থিট মিডিয়া' থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়। এটি আসল এবং আরাকান আর্মির এক কর্মকর্তার কাছ থেকেই এসেছে।”
তিনি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই আত্মসমর্পণ শুধু একটি সামরিক দল বা অঞ্চল নয়, বরং পুরো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা ও মনোবলের দুর্বলতাকে উন্মোচন করেছে। যদি সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার অভাবে ভুগতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে জান্তা সরকারের জন্য আরও বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।