সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ডাকা ইসলামাবাদমুখী বিক্ষোভে মঙ্গলবার পাকিস্তানে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষ, প্রাণহানি এবং গণগ্রেপ্তারের কারণে রাজধানী ইসলামাবাদ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শ্রীনগর মহাসড়কে এক বিক্ষোভকারী দল দুষ্কৃতমূলকভাবে রেঞ্জার্স কর্মীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে চারজন প্যারাট্রুপার এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন প্যারাট্রুপার ও দুই পুলিশ সদস্য। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
এছাড়াও, পিটিআইয়ের চলমান বিক্ষোভে সংঘর্ষের ফলে আরও চারজন রেঞ্জার এবং দুই পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে শতাধিক পুলিশ সদস্য।
ইসলামাবাদের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অশান্তি সৃষ্টি এবং জঙ্গি তৎপরতার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। রাজধানীর প্রবেশপথগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, এবং ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের ডি-চকে জমায়েত করার ঘোষণা দিয়ে পিটিআই নেতা-কর্মীরা রাজধানীর দিকে এগিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে তারা গতকাল সোমবার রাজধানীর উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষ ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে পিটিআইয়ের পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইসলামাবাদ অভিমুখী গাড়িবহরে রয়েছেন খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর এবং ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। তাদের নেতৃত্বে পিটিআই সমর্থকরা রাজধানীর ডি-চকে জমায়েত করার পরিকল্পনা করছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেছেন, ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকায় প্রবেশ করলে ইমরান খানের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হবে। সরকারি ভবনের সুরক্ষায় এলাকায় চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "কেউ যদি রেড জোনে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তাদের সঙ্গে কঠোরভাবে আচরণ করা হবে।"
শ্রীনগর মহাসড়কের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ স্থানীয় পিআইএমএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
ইমরান খানের সমর্থকদের দাবি, তার মুক্তি এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, এবং এই পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।