উত্তরাঞ্চলের তীব্র শীতে মানুষ কষ্ট পেলেও রাজশাহীর মোহনপুর, পুঠিয়া এবং বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় শীতার্তদের জন্য বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো গুদামে পড়ে আছে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উপদেষ্টা সফর বাতিল করায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কম্বল বিতরণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
রাজশাহী জেলা পরিষদ থেকে জানানো হয়েছে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজ হাতে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিকল্পনা করেছিলেন। এ কারণে প্রতিটি উপজেলায় দুই হাজার করে কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু উপদেষ্টার সফর আচমকা বাতিল হওয়ায় সেই কম্বলগুলো এখনো উপজেলা প্রশাসনের কাছে বস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে।
গত ২৪ থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজ হাতে উত্তরবঙ্গের ১২টি উপজেলায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণের পরিকল্পনা করেছিলেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, ২৭ ডিসেম্বর: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন, এরপর বগুড়ার সোনাতলা, শিবগঞ্জ এবং রাজশাহীর পুঠিয়া, মোহনপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুরে কম্বল বিতরণের কথা ছিল।
কিন্তু ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে উপদেষ্টা যখন বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন ঢাকায় সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফলে তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট কম্বলগুলো উপজেলা প্রশাসনের গুদামে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
বর্তমানে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শীত পড়ছে। আজ রোববার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, শুক্রবার ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং বৃহস্পতিবার ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে গুদামে থাকা কম্বল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় শীতার্ত মানুষের কষ্ট বাড়ছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নূর হোসেন বলেন, ‘এই কম্বলগুলো সাধারণ বরাদ্দ নয়। উপদেষ্টা নিজে উপস্থিত থেকে বিতরণ করবেন বলে এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন স্থানীয়ভাবে বিতরণ করলে পরে উপদেষ্টা আসলে নতুন করে কম্বল সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।’
বগুড়ার সোনাতলার ইউএনও স্বীকৃতি প্রামাণিক বলেন, ‘এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। যেভাবে নির্দেশনা আসবে, সেভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রাজশাহীর মোহনপুরের ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘উপদেষ্টার সফর বাতিল হওয়ায় কম্বল বিতরণ করা যায়নি। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি।’
রাজশাহী স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক পারভেজ রায়হান বলেন, ‘আমি শুনেছি কম্বলগুলো গুদামে পড়ে আছে। তবে বিষয়টি জেলা পরিষদের আওতাধীন। তাঁরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান বলেন, ‘আমরা এখনো নিশ্চিত নই, উপদেষ্টা মহোদয় আবার আসবেন কি না। তাই এখনো কম্বল বিতরণ করতে বলা হয়নি। আমরা কনফার্ম হওয়ার চেষ্টা করছি। যদি দেখা যায় তিনি আসবেন না, তাহলে ইউএনওদের নির্দেশ দিয়ে স্থানীয়ভাবে কম্বল বিতরণ শুরু করা হবে।’
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় উপদেষ্টার উপস্থিতিতে কম্বল বিতরণের পরিকল্পনা থাকলেও সফর বাতিল হওয়ায় তা এখনো সম্পন্ন হয়নি। উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষগুলো এখন কম্বল পাওয়ার আশায় রয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে। শীত শেষ হওয়ার আগে যদি কম্বল বিতরণের নির্দেশনা আসে, তবে তা কার্যকর করা হবে।