বাংলাদেশে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে (৩ জানুয়ারি), যশোরে অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, "স্বাধীনতার পর থেকে শুধু শাসকের হাত বদল হয়েছে, তবে দেশের সাধারণ মানুষ কিছুই পায়নি। একদল খেয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে।" তিনি আরও বলেন, "আমরা এরকম চাই না, আমরা চাই একটি স্বাধীন সার্বভৌম এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।"
আজহারী সরকারের দুর্নীতির ব্যাপারে সমালোচনা করে বলেন, "বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির আখড়াখানা। গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, আর এই লুটপাটের ফলে দেশের মানুষ ফুটপাতে বসে গেছে।"
তিনি কোরআনের শিক্ষা অনুসরণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতি সম্পর্কে বলেন, "যদি কোরআন থেকে প্রেসক্রিপশন না নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র কখনোই সুন্দর হতে পারবে না। শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়, এ জন্য কোরআনের আইন প্রয়োজন।"
ড. মিজানুর রহমান আজহারী আরো বলেন, "বাংলাদেশের আসল পরিচয় ইসলাম এবং এই দেশের সংসদ, বঙ্গভবন, সরকারি অফিসে কলেমার পতাকা উঠুক, আমরা তা চাই।" তিনি জনসংখ্যাকে দেশের একটি বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে বলেন, "আমাদের জনসংখ্যা অনেক বড় আশীর্বাদ, যদি আমরা এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি, বাংলাদেশ ২০ গুণ উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে।"
আজহারী মানবসম্পদ উন্নয়নকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পদ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, "প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদের চেয়ে দামি সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। এই মানবসম্পদকে সোনার মানুষ বানাতে হবে, যাতে তারা বিশ্বজয় করতে পারে।"
ড. মিজানুর রহমান আজহারী প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করে, কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্য কম। তাদের অদক্ষতার কারণে তারা কম বেতন পায়।" তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, "আমরা আমাদের শ্রমিকদের আরও দক্ষ করে বিদেশ পাঠাতে চাই, যাতে তারা বেশি বেতন পায় এবং রেমিটেন্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্সের টাকায় দেশের অর্থনীতি সচল থাকে, তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের রেমিটেন্স ফাইটারদের, অর্থাৎ প্রবাসী ভাইদের সম্মান জানাতে হবে।"
আজহারী সরকার এবং অভিভাবকদের প্রতি একটি শক্তিশালী আহ্বান জানান, "আমাদের সরকারকে ১৮ কোটি জনগণকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। মানবসম্পদকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আমরা একটি উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি।"
তিনি ইউনূস সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "আপনারা সংস্কার করতে পারেন, তবে কিছু সংস্কার পরবর্তী সরকারে রাখতে হবে। আমাদের যে হিউজ ম্যান পাওয়ার, মানবসম্পদ, সেটাকে ডেভেলপমেন্ট করতে হবে।"
এদিনের তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের পাশাপাশি চার দিনব্যাপী ইসলামী বইমেলা এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় ২২টি স্টল রয়েছে এবং শিশুদের জন্য 'কিডস জোন' তৈরি করা হয়েছে। মাহফিলে বক্তৃতা করেন আল্লামা মামুনুল হক, আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, এবং মুফতি আমির হামজা।
এ অনুষ্ঠানটি যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষের অংশগ্রহণে উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
ড. মিজানুর রহমান আজহারী’র এই বক্তৃতা বাংলাদেশে একটি নতুন আশা এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে, যেখানে দুর্নীতির অবসান এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।