ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতী রোগ মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স প্রতিরোধে চীনের তৈরি প্রথম টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হেনান প্রদেশের রাজধানী ঝেনঝৌ শহরের হেনান ইনফেকশন ডিজিজ হাসপাতালে এই ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই ট্রায়াল ছয় মাস ধরে চলবে এবং এতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মোট ১২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৬০ জন সুস্থ ব্যক্তি, ৩০ জন পুরুষ যারা পুরুষদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং ৩০ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এমপক্স মোকাবিলায় টিকা তৈরির চেষ্টা করছে অনেক দেশ, তবে এখন পর্যন্ত সফলতা পেয়েছে মাত্র তিনটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক ও চীন। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) অনুমোদিত দুটি টিকার নাম হলো জেওয়াইএনএনইওস (JYNNEOS) এবং এসিএএম২০০০ (ACAM2000)। ডেনমার্কভিত্তিক ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাভারিয়ান নর্ডিক এ/এস একটি টিকা তৈরি করেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে এবং ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দুই ডোজে দেওয়া যায়।
এমপক্স টিকা তৈরিতে চীন বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে সফল হলো। চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ কর্পোরেশনের অধীনস্থ সাংহাই ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস (এসআইবিপি) এককভাবে টিকাটি তৈরি করেছে। ভ্যাকসিনটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়। যদিও এই টিকার নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত জুনোটিক রোগ, যার অর্থ এটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি গবেষণাগারে বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ ভাইরাস শনাক্ত হয়, তাই এর নামকরণ হয় “মাঙ্কিপক্স”। ১৯৭০ সাল থেকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব আফ্রিকার মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চলের অন্তত ১১টি দেশে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এটি একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ ছিল। তবে ২০২২ সালের জুলাই মাসে এমপক্স দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে।