উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে মাসিক খরচ সামাল দিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনুরোধে সাড়া দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, যার ফলে ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সুদহার বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ শতাংশ, যা বর্তমানে ২০ শতাংশ।
রোববার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, "সুষ্ঠু ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং নীতি সুদহার ও ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান তহবিল ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।" ব্যাংকগুলো ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে এই সীমার মধ্যে সুদহার নির্ধারণ করবে। ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোকেও এই নির্দেশনা অনুসরণ করে মুনাফার হার নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২,৬৬৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আগের মাস আগস্টে এ খরচ ছিল ২,৩৩২ কোটি টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৩৩৬ কোটি টাকা বা ১৪.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশিরা বিদেশে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। সেপ্টেম্বরে এ খাতে খরচ হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে রিটেইল আউটলেট সার্ভিসে, যেখানে খরচের পরিমাণ ৭৪ কোটি টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই আগস্টের তুলনায় খরচ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বৃদ্ধির ফলে মাসিক কিস্তির বোঝা আরও বেড়ে যাবে। যাঁরা নিয়মিত সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে সুদভার আরও বাড়বে। অনেক গ্রাহক তাই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হতে পারেন।
সুদহার বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে গ্রাহকদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত, বিলাসবহুল খরচ কমিয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সীমিত রাখা। সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করলে অতিরিক্ত সুদের বোঝা এড়ানো যাবে। অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সুদহীন সময়সীমা প্রদান করে। এই সুবিধা ব্যবহার করার মাধ্যমে সুদ খরচ কমানো সম্ভব।
ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সুশৃঙ্খলতা বজায় রেখে খরচ পরিচালনা করা জরুরি।