প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৬, ২০২৫, ৬:১২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ৩:৫৩ অপরাহ্ণ
খুলনায় আওয়ামীলীগ নেতার ইজারা প্রাপ্ত ফেরিতে নিয়মের বালাই নাই! ঘাটে চলছে চাঁদাবাজি
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক , শেখ পরিবারের আস্থাভাজন ফিরোজ মোল্লার ইজারা প্রাপ্ত খুলনার দিঘলিয়া নগরঘাটা ফেরিতে দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়মে পরিণত করে স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে । আওয়ামী লীগের এই নেতা ফেরির ইজারা প্রাপ্তির পর পারাপারকারী যানবাহন হতে রশিদ ছাড়া প্রকাশ্যে দিবালোকে জোরপূর্বক টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত টোল বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কে দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
দুর্নীতি ও অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে নগরঘাটা ফেরিতে। একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও ভুক্তভোগীরা কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ভোক্তা অধিকার ও যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপিত হওয়ার পরও প্রশাসন নীরব দর্শক।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্যহীন দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে গত বছর ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের বিদায় হলেও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ পরিবারের আশীর্বাদ পুষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা ফিরোজ হোসেনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে তৎকালীন সড়কের নিবার্হী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ সড়ক বিভাগ, খুলনার অধীন দিঘলিয়া-(রেলিগেট)- নগরঘাটা ফেরীর ইজারা পাইয়ে দেন। মেসার্স ফারদিন ষ্টোর বাজার নামে একটি প্রতিষ্ঠান যার প্রোপাইটর উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোঃ ফিরোজ মোল্লা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরাধীন নগরঘাটা ফেরীর পারাপারকৃত যানবাহন থেকে রশিদ ছাড়া জোরপূর্বক প্রকাশ্যে দিবালোকে টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামীলীগ আমল থেকেই । টোলের রশিদ চাইলে হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। টোলের তালিকা অনুযায়ী ফেরিতে পারাপার কারী জানবাহনের ভাড়া হেভী ট্রাক (বোঝাই/খালি) ১০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ৫০ টাকা, বড় বাস ৪৫ টাকা, মিনি ট্রাক ৩ টন পর্যন্ত লোড ধারণ সক্ষম ৪০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার/ট্রাক্টর ৩০ টাকা, মাইক্রোবাস ২০ টাকা, পিকআপ, প্রাইভেট জীপ ২০ টাকা, অটো টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ব্যাটারী চালিত ৩ চাকার যান ৫ টাকা ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও সে নির্দেশনাকে বৃদ্ধা অঙ্গুলি দেখিয়ে ইজারাদার ফিরোজ মোল্লা ভয়ভীতির মাধ্যমে দিনদুপুরে কয়েক গুণ বেশি টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে খুব্ধো তারা। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে কিভাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা প্রকাশ্য দিবালোকে নগরঘাটা ফেরিতে টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন করছে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন।
শুধু অতিরিক্ত ফেরীর টোল উত্তোলন নয় ইজারাদার ফিরোজ মোল্লার নির্দেশে তার নিয়োজিত লোকজন অবৈধভাবে নগরঘাটের রেলিগেট পাড়ে ফেরীতে পারাপারকৃত গাড়ি থেকে জোর করে পুনরায় টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন করছে সিদ্দিক মুন্সী, দেলোয়ার ও নুরুজ্জামান। ফেরীতে পারাপারকৃত যানবাহন থেকে টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন বন্ধ, ইজারা বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। ইতিপূর্বে একাধিকবার অভিযোগের তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় পরও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তৎকালীন সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের তৎকালীন নিবার্হী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ফেরি সহ ঘাটের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় উলেখ করেছেন এবং আমি সরেজমিনে গিয়ে ইজারাদারকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। এরপরও ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়নি কেন তার কোন সদ উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ভুক্তভোগী এস এম শামীম, মোঃ জামিল হোসেন, সাকিব খান, জাহিদ জানান, আমরা লিখিত ভাবে অভিযোগ দাখিল করেছিলাম । অভিযোগ পেয়ে খুলনা পুলিশ সুপার অফিস আমাদের লিখিত জবানবন্দি নিয়েছে । খুলনা নগরীর দৌলতপুর থানায় একাধিকবার উপস্থিত হয়েছি এরপরও নগরঘাটা ফেরিতে টোলের নামে চাঁদাবাজি এবং ঘাটের চাঁদাবাজি কোন কিছুই বন্ধ হয়নি আমরা হতাশ।
বর্তমা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ তানিমুল হক বলেন, নগরঘাটা ফেরিতে অতিরিক্ত টোল উত্তোলনের বিষয়ে ইতিমধ্যে অবহিত হয়ে ইজারাদারকে প্রাথমিক সতর্ক করা হয়েছে। এর পরও অতিরিক্ত টোল বন্ধ না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ফেরিতে সরকার নির্ধারিত টোল উত্তোলনের বিষয়ে বলা হয়েছে। এরপর ও অতিরিক্ত টোল উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত