প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৬, ২০২৫, ৪:১৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৭, ২০২৫, ২:২৮ অপরাহ্ণ
খুলনার দিঘলিয়ায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ: যুবক নিহত, পুলিশ বাদী হয়ে মামলা, অস্ত্র উদ্ধার
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ও নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় হামিদপুর অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় ১৫ মার্চ হাসিম মোল্লা ( ৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় গাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা ও তার ভাই যুবলীগ নেতা হামিম মোল্লা এবং যুবলীগের সোহান মোল্লার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদান , হামলার ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কালিয়া থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
১৬ মার্চ বিকেলে হাসিম মোল্লার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। কালিয়া থানা পুলিশের কাজে বাঁধা প্রদান মামলায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির এক নেতা।
প্রতিপক্ষের হামলায় হাসিম মোল্লা (৩৮) নামে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। অপর আহতরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য জনি মোল্লা সহ কয়েকজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৫ মার্চ) পাল্টা হামলার প্রস্তুতির সময় নিহতের পক্ষের গ্ৰুপের হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের সিরাজ মোল্লার বাড়ি থেকে একটি ওয়ান সুটারগান ও গুলিসহ সিরাজ মোল্লা (৩৮) ও আজিজার (৫৫) নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করে যৌথ বাহিনী। কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রশিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
(১৫ মার্চ) রাতে উত্তেজিত জনতা হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও গাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু ও তার ভাই যুবলীগ নেতা হামিম মোল্লা এবং সোহান মোল্লার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ( ১৫) মার্চ সকালে কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুর গ্রামে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা হামিম ও সোহানের নেতৃত্বে শটগান, বন্দুক, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাটি নিয়ে কাদের মোল্লার বাড়ি হামলা করেন। এ ঘটনা ঠেকাতে গিয়ে দু'জন পুলিশ সদস্য সহ অন্তত ৮ জন আহত হয়।
এ ঘটনায় ঐদিন দুপুরে জনি মোল্লা গ্রুপের হাসির মোল্লা (৩৮) নামে এক ব্যক্তি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
হামলার শিকার হয়ে জনি গ্রুপের লোকজন পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেয়ার সময় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে জনি গ্রুপের দু'জনকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান সুটারগান ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।
(১৫ মার্চ) হামলার ঘটনার সময় পুলিশের কর্তব্য পালনে বাধা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় (১৬ মার্চ) কালিয়া থানায় কালিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোমরেজ আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রশিদুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সহ সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও পুলিশ কর্তব্য পালনের সময় তাদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মোমরেজ আলী বাদী হয়ে ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এবং অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা দায়ের হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহীন বলেন, দু' উপজেলার বর্ডার এলাকা তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উভয় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান ও পুলিশ সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে (১৫ মার্চ) হামলার ঘটনায় নিহত হাসিম মোল্লা হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া অস্ত্র ও গুলিসহ আটক ব্যক্তিরা হলেন- ওই গ্রামের মৃত আহমেদ মোল্লার ছেলে সিরাজ মোল্লা ও একই গ্রামের মকবুল শেখের ছেলে আজিজার শেখ। তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান সুটারগান ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।
স্বৈরাচারের দোসর যুবলীগ নেতা হামিম মোল্লা ও ঠান্ডা মোল্লা দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কালিয়া উপজেলার হামিদপুর এলাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের কব্জায় রেখেছিল বলে স্থানীয়রা জানান।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত