জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করার বিষয়টি সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্বীকার করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে এই তথ্য দিয়েছেন যে, এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করা হয়েছিল। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) পলককে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, এবং তিনি স্বীকার করেছেন যে, গণহত্যার তথ্য বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করতে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল।
গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুনাইদ আহমেদ পলক সরকারিভাবে দাবি করেছিলেন যে, ডেটা সেন্টারে আগুন এবং সাবমেরিন কেবলের তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এ তথ্যকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় জুনাইদ আহমেদ পলক, বিটিআরসি এবং এনটিএমসি সরাসরি ইন্টারনেট বন্ধে জড়িত ছিল।
এর আগে ১৩ আগস্ট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুরো দেশে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। এই সময়ে পলক ডেটা সেন্টারের আগুন এবং অন্যান্য ঘটনাগুলোর কথা প্রচার করলেও সেগুলি ছিল অসত্য।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে যখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, তখনই জুনাইদ আহমেদ পলক দেশের ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নানা কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগ এবং আইএসপির তার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সরকারি হিসেবে সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে তিনি জানান, জরুরি সেবা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেই ইন্টারনেট সংযোগ ছিল।
ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোও ১৩ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিষয়ে বলেন, ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যমগুলো চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে যদি সেগুলো আইন মেনে চলে। অথচ তিনি নিজে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সক্রিয় ছিলেন।
ইন্টারনেট বন্ধ করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সরাসরি জড়িত ছিলেন, এমন একটি তথ্য ট্রাইব্যুনালের তদন্তে উঠে এসেছে। তার স্বীকারোক্তির পর নতুন করে এই বিষয়টি দেশের জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যার তথ্য আড়াল করতে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল।