জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হিমবাহ দ্রুতগতিতে গলে যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশগত ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। লিথুনিয়ার ভিলনিয়াস ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব জিওসায়েন্সের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে শুধু পরিবেশ নয়, ভূপৃষ্ঠের কাঠামোতেও পরিবর্তন ঘটছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, হিমবাহকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনার হিসেবে ধরা হয়। এটি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হিমবাহগুলোতে পৃথিবীর প্রায় ৭৫ শতাংশ স্বাদুপানি সঞ্চিত। এসব পানি ধীরে ধীরে নদী ও হ্রদে মিশে পানিপ্রবাহে সহায়তা করে। পাশাপাশি, সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে হিমবাহ আমাদের গ্রহকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
ইউরোপের উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বরাবর অনেক এলাকার সীমানা ভাগ করা হয়। হিমবাহের আকার পরিবর্তনের ফলে এসব এলাকার মানচিত্র পুনরায় আঁকতে হচ্ছে। ইতোমধ্যেই হিমবাহের কারণে ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সীমানায় কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
২০২2 সালে সুইজারল্যান্ডের ম্যাটারহর্ন হিমবাহের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের মানচিত্রে পরিবর্তন আনা হয়।
বিজ্ঞানী এলজে বুসলাভিচিউটি ও লরিনাস জুকনার জানিয়েছেন, সর্বশেষ বরফযুগে ২০-২২ হাজার বছর আগে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এলাকার হিমবাহের আকার পরিবর্তনের ফলে ইউরোপের ভূ-পৃষ্ঠে পরিবর্তন হয়েছিল। বর্তমানে ইউরোপের অনেক হিমবাহ আল্পস, স্বালবার্ড, আইসল্যান্ড ও পাইরেনিস অঞ্চলে অবস্থিত।
হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে জাতীয় সীমানা স্থানান্তরিত হতে পারে। এটি শুধু ভূ-রাজনৈতিক নয়, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও হিমবাহের বর্তমান পরিস্থিতি এটাই নির্দেশ করে যে আমাদের গ্রহে পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।