বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে তরুণদের একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে নতুন মুখ আনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছে, তা নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করছে।
সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থান যে অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে, তা তরুণদের রাজনৈতিক মানসিকতা এবং চরিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এই পরিবর্তিত মানসিকতা এবং দেশের পরিবর্তনের সম্ভাবনায় তরুণরা নিজেদের দেখাতে চান। তিনি আরো বলেন, দেশের পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষকে খুঁজে বের করা হচ্ছে, বিশেষত তারা যারা নিজ জীবন ঝুঁকিতে রেখে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মূলত তরুণ নেতৃত্বের সন্ধানেই এটি করা হচ্ছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তরুণরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন এবং ব্যাপকভাবে চাউর হয় যে, শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি জুলাই আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছে, যা ১৪৭ সদস্য বিশিষ্ট। পাশাপাশি সংগঠনটি দেশব্যাপী ৬৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করছে। এখন পর্যন্ত ১৭টি জেলা, ৩টি মহানগর, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, যারা নাগরিক কমিটি থেকে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চান, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তিনি জানান, যারা নাগরিক কমিটির মধ্যে থাকবেন, তারা বিপ্লব এবং একতার প্রতীক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য একটি আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের মতো প্রতিষ্ঠিত দলগুলো নিজেদের আদর্শিক জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা ও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তাই একটি নতুন দলের জন্যও একটি শক্তিশালী আদর্শিক জায়গা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নতুন কোনো বিষয় নয়। অতীতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভাঙনের মাধ্যমে অনেক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। পাশাপাশি, কোটা আন্দোলন এবং ডাকসুর ভিপি নির্বাচনের পরও নতুন দল গঠনের প্রচেষ্টা হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। স্বৈরাচারবিরোধী ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠ থেকে পলায়ন নতুন বাস্তবতার সৃষ্টি করেছে, যা তরুণদের জন্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ সুগম করতে পারে।
বাংলাদেশে নতুন তরুণদের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে শীঘ্রই। এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন দিশা দিতে পারে এবং একটি শক্তিশালী আদর্শিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইবে।