যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উত্থাপন করেছে গুরুতর দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ। তদন্তে জানা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। নোটারি পাবলিকে ব্যবহৃত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সইও জাল বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে, যদিও আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন যে তিনি শুধুমাত্র চেম্বারে বসে নোটারি সেবার অনুমোদন প্রদান করেন এবং টিউলিপ কিংবা তার বোনের সাথে পূর্বে কোনো পরিচিতি ছিল না।

দুদকের আরও দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিটি তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট নিজ ও তার পরিবারের জন্য নিশ্চিত করেন। অভিযোগ অনুসারে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির বরাদ্দ থেকে উপকৃত হয়েছেন। এই ঘটনা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অনৈতিক ব্যবহার ও রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের চরম উদাহরণ হিসেবে দুঃসাহসিক দুর্নীতির অন্তর্নিহিত চিত্র তুলে ধরছে।

সংস্থাটি আরও বলেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করতে একটি ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নথিতে ব্যবহৃত সিলটি যদিও তাঁর নামে, কিন্তু স্বাক্ষরটি তাঁর নয়। এই নথির মাধ্যমে প্রকৃত মালিকানা গোপন করার উদ্দেশ্য ছিল বলে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ তুলেছে।

চার্জশিটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবে, যা প্রসিকিউশনের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে। টিউলিপ সিদ্দিক জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী হওয়া। তবে, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। একই সাথে, দুর্নীতি দমন কমিশন জানান, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় জমি বরাদ্দ ও অবৈধ সম্পত্তির ব্যবহারের ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করা হয়েছে, এখানে অবৈধভাবে ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তাঁর সন্তান ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, টিউলিপ সিদ্দিক ইতোমধ্যে ঢাকায় একটি সম্পত্তির মালিক হওয়ার পরও, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত জমি লটারির পদ্ধতি পাশ কাটিয়ে, নিয়ম পরিবর্তন ও বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে প্লটের মালিক হন।

এই বিতর্কিত নথিটি ২০১৫ সালে তৈরি হয় যখন টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখনো তিনি যুক্তরাজ্যের সরকারের মন্ত্রী ছিলেন না। দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি, এই ঘটনা কেবল আইসবার্গের শীর্ষভাগ—আরো অনেক অভিযোগ এখন তদন্তাধীন রয়েছে, যা সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবারের উপর বিশাল দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরবে।