জ্যামাইকার চলমান দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশি দলের তরুণ পেসার নাহিদ রানা চমকপ্রদ বোলিংয়ে তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার অর্জন করেছেন, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে, বাংলাদেশ স্বাগতিক ক্যারিবিয়ান পেসারদের তাণ্ডবে মাত্র ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। ক্যারিবিয়ান পেসার জেডেন সিলেস ১৫.৫ ওভারে মাত্র পাঁচ রান দিয়ে চারটি উইকেট তুলে নিয়ে ১৯৭৮ সালের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কৃপণ বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন। তবে নাহিদ রানার আক্রমণ কেবল সিলেসের দৃষ্টি আকর্ষণ নয়, বরং খেলা বদলে দেয়।
নাহিদ রানার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। মাত্র ২২ বছর বয়সী এই পেসার তার গতির প্রদর্শনী দিয়ে পাকিস্তান সফরের রেকর্ড গড়ার পর এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরো একবার তার নাম লিখিয়ে ফেললেন। বাংলাদেশি তরুণ পেসার তার প্রথম টেস্ট ফাইফারটি নেন এবং ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ১৮ ওভারে ৬১ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট তুলে নেন। তার এমন দাপুটে বোলিংয়ে স্বাগতিকরা মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।
প্রথম ইনিংসে নাহিদ রানার বোলিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তার দুর্দান্ত গতির বোলিং। ১৩তম ওভারে প্রথম বলের গতিই ছিল ১৫০.১ কিলোমিটার, এরপরের বলগুলোও ১৪৯ কিলোমিটার বা তার ওপরে ছিল। ইনিংসের একেবারে প্রথমদিকে যখন স্বাগতিকরা নির্ভীকভাবে খেলছিল, তখন এই তরুণ পেসারের নিখুঁত লাইন ও লেংথের জন্যই তারা ধসে পড়ে। এর পরের ওভারগুলোতে নাহিদ ১৪৮ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে বোলিং করছিলেন, যা কেবল স্বাগতিকদেরই নয়, ম্যাচের ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপকে এমন বললেন, "নাহিদ রানাকে চিনে রাখুন, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস!"
যদিও নাহিদ রানার বোলিং দুর্দান্ত ছিল, তিনি নিজের বোলিং নিয়ে সাদাসিধে এবং আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন। একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "সর্ব প্রথমত ওপরওয়ালার শুকরিয়া আদায় করতে চাই, টেস্টে প্রথমবার পাঁচ উইকেট পেয়েছি। বেশি কিছু চেষ্টা করিনি, শুধু 'লাইন টু লাইন' বোলিং করে চেষ্টা করেছি ব্যাটসম্যানদেরকে জায়গা না দেওয়ার।" তার এই পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসই তাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।
জাতীয় দলে ওঠার আগে নাহিদ রানা তার ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নিয়মিতভাবে গতির প্রদর্শন করতেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) তার গতির আক্রমণে অনেক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিয়েছেন। পাকিস্তান সফরে তিনি ১৫২ কিলোমিটার গতিতে বল করে রেকর্ড গড়েন, যা বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত গতির বল।
বাংলাদেশের জন্য ম্যাচের প্রথম ইনিংসে সমস্যা ছিল, ১৬৪ রানেই তারা অল আউট হয়ে যায়। তবে নাহিদ রানার দুর্দান্ত বোলিং ও তাসকিন-হাসানদের সমর্থনে বাংলাদেশ ১৮ রানের লিড নিয়েছে। নাহিদ রানার পরিশ্রমী বোলিং একধাপ এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের স্কোরকে।
এখন পর্যন্ত এই তরুণ পেসারের বোলিং প্রদর্শন বাংলাদেশে পেস বোলিংয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তার এ ফাইফারের সাহায্যে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে আরও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো।