সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামে স্থাপিত তামাই তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি প্ল্যান্ট) নির্মাণের ২৬ বছর পার হলেও এখনও এটি চালু করা যায়নি। নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই প্রকল্পটি বর্তমানে অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ও বৈদ্যুতিক মোটরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ।
১৯৯৭ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে প্ল্যান্টটির নির্মাণ শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তামাই গ্রামের তাঁতশিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য পানি শোধন করে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই এটি অচল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।
ইটিপি প্ল্যান্টটি চালু না হওয়ায় তাঁতশিল্প ও সুতা রঙের কাজে ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য পানি শোধন ছাড়াই খাল, বিল, ডোবা এবং নদীতে ফেলা হচ্ছে। মাটির স্তরের মাধ্যমে কেমিক্যালযুক্ত পানি ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে পানযোগ্য জলকেও বিষাক্ত করে তুলছে। স্থানীয় হুড়া সাগর নদীতে বর্জ্যমিশ্রিত পানি গিয়ে মাছের মৃত্যু ঘটাচ্ছে এবং নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা দূষিত পানি ব্যবহারে নানা ধরনের রোগে ভুগছেন।
তামাই গ্রামের তাঁতশিল্পের জন্য ইটিপি প্ল্যান্টটি অত্যন্ত জরুরি। গ্রামে প্রায় ১৫,০০০ পাওয়ারলুম এবং ৩৫টি রঙ কারখানা রয়েছে। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যা আশপাশের জলাশয় ও নদী দূষণ করছে। স্থানীয় পুকুরগুলো বর্জ্য জমে মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।
তামাই গ্রামের বাসিন্দা ও তাঁত ব্যবসায়ীরা প্ল্যান্টটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন। তাঁত ব্যবসায়ী ফজলার রহমান বলেন, "অনেক আশা নিয়ে জমি দিয়েছিলাম, কিন্তু প্ল্যান্টটি চালু হলো না।" স্থানীয় গৃহিণী মরিয়ম পারভীন জানান, "বর্জ্য মিশ্রিত পানি আমাদের নলকূপেও চলে আসছে। বাধ্য হয়ে সেই দূষিত পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে।" পরিবেশ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল গফুর জানান, জনবল সংকটের কারণে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
দুই যুগ ধরে অবহেলিত অবস্থায় থাকা তামাই ইটিপি প্ল্যান্টটি চালু না হওয়ায় স্থানীয় পরিবেশ এবং জনগণ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছে। দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। প্ল্যান্টটি সচল হলে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং তাঁতশিল্পের টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।