নির্বাচনে এক দলের মনোনয়ন না পেয়ে অন্য দলের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। প্রস্তাব অনুযায়ী, দল পরিবর্তন করে অন্য দলের প্রার্থী হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দলে তিন বছরের সদস্যপদ থাকা বাধ্যতামূলক। কমিশনের মতে, নির্বাচনের সময় দল ভাঙাগড়ার এ খেলা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা দুর্নীতি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনৈতিক কার্যক্রম বাড়ায়।
উদাহরণ হিসেবে, ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনে নির্বাচন করেন শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। তিনি নৌকা প্রতীকে জয়ী হলেও পরবর্তীতে দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি হন।
বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোটের অংশগ্রহণের জন্য কোনো ন্যূনতম হার নির্ধারিত নেই। কমিশনের মতে, ভোটারদের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোট পড়ার ন্যূনতম একটি হার নির্ধারণ করা হবে। যদি নির্ধারিত হারের নিচে ভোট পড়ে, তবে নির্বাচন বাতিল হবে।
২০২০ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ৫.২৫% ভোট পড়েছিল, যা এ সমস্যার একটি উদাহরণ।
কমিশন ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করছে। ‘না’ ভোট চালু হলে ভোটাররা অযোগ্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে পারবেন। কোনো প্রার্থী ‘না’ ভোটের তুলনায় কম ভোট পেলে সেখানে পুনরায় নির্বাচন হবে।
এটি একক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ রোধ করবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করতে বাধ্য করবে।
কমিশন অন্তত ১৫-১৬টি বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নির্ধারিত ভোটের হার পূরণ না হলে নির্বাচন বাতিল। নারী আসন বৃদ্ধি ও নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন। আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা। প্রার্থীর দেওয়া তথ্য যথাযথভাবে যাচাই করার বিধান, নির্বাচনি মামলা নিষ্পত্তির সময় নির্ধারণ, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা পরিবর্তন।
কমিশন এ পর্যন্ত ৩০টি বৈঠক করেছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সাংবাদিক, নারী প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে চলতি মাসেই চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে।
কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সংস্কার অপরিহার্য। প্রার্থী মনোনয়ন, ভোটারের অংশগ্রহণ, এবং ইসির ক্ষমতা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে আমরা জোর দিচ্ছি। আমাদের কোনো বিশেষ এজেন্ডা নেই। অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতেই সুপারিশ চূড়ান্ত করব।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনগণের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।