চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এক মতবিনিময় সভায় ফ্যাসিবাদ, প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, মো. হাফিজুর রহমান, ফিরোজ আহমেদ এবং মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা যদি বেয়াদব না হতাম, তাহলে শেখ হাসিনাকে নামানো যেত না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকেই নিজের আখের গোছানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
মেহেদী হাসান বলেন, “ফ্যাসিবাদকে আমরা সবাই মিলে নামিয়ে দিয়েছি। তবে এ কাজটি করতে কেন ১৬ বছর সময় লাগল? কারণ, যতক্ষণ পর্যন্ত এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েনি, ততক্ষণ আমরা কেউ প্রতিবাদ করিনি।”
সভায় মেহেদী হাসান বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রধান কাজ হলো প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করা। আমাদের কাজ একটি নিরপেক্ষ ও সুবিন্যস্ত প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা, যেখানে কোনো ধরণের ক্যাডার ক্যাডার মারামারি থাকবে না।”
কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এ বিষয়ে বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের যে সংস্কৃতি ছিল, সেটিও নষ্ট করা হয়েছে। আমাদের এখন প্রয়োজন একটি নির্মোহ ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা।”
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে হওয়া আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আইয়ুব মিয়া বলেন, “এই আন্দোলনে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণই ছিল বড় শক্তি। বিশেষ কোনো শ্রেণি বা ক্যাটাগরি এ বিপ্লব ঘটাতে পারেনি। নাগরিকদের সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি ছিল এই পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি জনগণের অভিপ্রায়কে কাজে লাগিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গঠন করতে পারি, তাহলে একটি সুন্দর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে জনগণের ভূমিকা, প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করার প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক সুবিচার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার গুরুত্ব, নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি উন্নত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা।
সভায় বক্তারা প্রশাসনিক সংস্কার এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর জোর দেন। তাদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও উন্নত করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হবে।