বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে, কারণ অবশেষে ফিফা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য এসেছে একটি দারুণ সুসংবাদ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীরা তাদের জাতীয় দলের একটি নতুন তারকাকে আশা করতে পারবেন।
বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন হামজার ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই ঘোষণার পর হামজা নিজেও একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য তার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বাফুফের পেজে প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, "আমি বাংলাদেশের পক্ষে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি, দ্রুতই দেখা হবে।"
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন হামজার সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিল অনেক দিন ধরে। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও অনুমোদনের পর, ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সব বাধা কেটে গেছে। ২০২৩ সালের জুনে হামজা বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং আগস্ট মাসে তা পেয়েছিলেন। এরপর ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) থেকেও ছাড়পত্র মেলে তাঁর।
বাংলাদেশের ফুটবল দলে বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। ২০১৩ সালে জামাল ভূঁইয়া প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় হিসেবে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। এরপর ২০১৯ সালে ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক কাজী বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি পেয়েছিলেন। তবে হামজাকে নিয়ে আলোচনা ও আগ্রহের কারণ হলো, তিনি ইউরোপীয় শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব ফুটবলে খেলা একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামবেন।
২৬ বছর বয়সী হামজা চৌধুরী বর্তমানে লেস্টার সিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটির অধিনায়ক ছিলেন এবং ক্লাবের হয়ে এফএ কাপ জিতেছেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় সেরা টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ এবং তার পরবর্তী ধাপ উয়েফা কনফারেন্স লিগেও তিনি খেলেছেন।
হামজা চৌধুরী তার ক্যারিয়ারে অনেক সফল মুহূর্ত পার করেছেন এবং এবার তিনি বাংলাদেশের ফুটবল দলে যোগ দিয়ে দেশের ফুটবল ভক্তদের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছেন।
হামজা চৌধুরী জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা, তবে তার মায়ের পরিবার বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। হামজার মা’র সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং সিলেটে সফরও করেছিলেন। সুতরাং, তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি এক গভীর ভালোবাসা রয়েছে, যা তার জাতীয় দলে খেলার সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হচ্ছে।
হামজা চৌধুরী দেশের জন্য খেলতে প্রস্তুত হওয়ায় বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা এখন আরো বেশি আশাবাদী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের জন্য জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া সহজ বিষয় নয়, তবে হামজা তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছে বাংলাদেশের জন্য খেলবেন—এটি দেশের ফুটবলে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
অবশেষে, হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের ফুটবল দলে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীরা একটি নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়ের আগমনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আশা করা হচ্ছে, তার যোগদান বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন একটি শক্তিশালী অধ্যায় শুরু করবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের পরিচিতি আরও বাড়াবে।