বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কোনও নির্দিষ্ট সরকারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। দুই দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণের ভিত্তিতেই সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া উচিত। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মতামত ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার বৈঠকের শুরুটা কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ ছিল, কারণ ভারত দীর্ঘ ১৫ বছর এক ধরনের সম্পর্কের মধ্যে অভ্যস্ত ছিল, যা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এখন ছয় মাস পর তারা আরও ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা চলছে। বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া, ভারত বারবার অভিযোগ করছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা চলছে। তবে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তিনি জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত প্রচার হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতকে শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছে, তবে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন এমনটি নিশ্চিত করতে চান।
তিনি সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার বিষয়টি নিয়ে বলেন, এটি অগ্রহণযোগ্য এবং ভারত চাইলে এটি বন্ধ করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ সম্পর্কিত জেলেদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের বন্দী জেলেদের মুক্তি দেয়, তবে তদন্তের পর যদি কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আইন ভঙ্গ করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে, বিশেষ করে কয়লার দাম নিয়ে আলোচনা করা দরকার। বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়। তিনি আশা করেন, আদানি গ্রুপের সঙ্গে আরও ভালোভাবে আলোচনা করে একটি ন্যায্য সমাধানে পৌঁছানো যাবে।
এছাড়া, বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করতে পারেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে একসঙ্গে থাকলে এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো সরকারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, তা দুই দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের সময়েও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং গঙ্গা পানি চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় হয়েছিল। তিনি বলেন, এই সম্পর্ককে দলের সীমাবদ্ধতায় না রেখে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ তৈরি করা উচিত।
SEO Tags: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, মো. তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক, সীমান্ত হত্যা, আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, শেখ হাসিনা, নরেন্দ্র মোদি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা, বিএনপি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, বাংলাদেশ ভারত সংলাপ, গঙ্গা পানি চুক্তি, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, ভারতীয়