আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলন ঘিরে যেমন বিশ্বনেতাদের ভিন্নমত রয়েছে, তেমনি বিতর্কের কেন্দ্রে আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ।
সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ শুরু থেকেই বাকু সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টকে 'স্বৈরাচারী, অত্যাচারী ও নিপীড়ক' বলে অভিহিত করেন এবং এমন একটি দেশে জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করাই অনুচিত বলে মন্তব্য করেন। গ্রেটা এ নিয়ে নিজের অবস্থানে অটল থেকে আর্মেনিয়া সফরে চলে যান, যা আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার দীর্ঘদিনের বৈরিতার পটভূমিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
সম্মেলনে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও পরিবেশ মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ শুরুতেই কপ২৯-এ যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর মধ্যেই ইলহাম আলিয়েভ সম্মেলনের মঞ্চে ফ্রান্সকে একহাত নেন। তিনি দাবি করেন, ফ্রান্স তার উপনিবেশগুলোতে পরিবেশ আন্দোলন দমন করছে। এই মন্তব্যের পর ফ্রান্সের পরিবেশমন্ত্রী বাকু সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন।
আলিয়েভ আরও দাবি করেন, আজারবাইজানকে তেলের দেশের বাদশাহ বলে অপবাদ দেওয়ার কিছু নেই, কারণ তাদের তেল উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ সৃষ্টির ক্ষমতা মানুষের নেই, এটি ঈশ্বরের দান।
সম্মেলনের পঞ্চম দিনে বিশ্বনেতাদের বিদায়ের পর আকস্মিকভাবে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেন প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ। এটি অনেকের মতে তাঁর ভাবমূর্তি রক্ষার কৌশল। আগে কোনো পরিবেশকর্মীকে অলিম্পিক স্টেডিয়াম এলাকায় ভিড়তে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার তারা বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে রঙিন পোশাকে নেচেগেয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কাগজের তৈরি সাপ নিয়ে প্রকৃতির গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কেউবা জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষতি নিয়ে পোস্টার হাতে নীরব প্রতিবাদ করেছেন।
পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিলেও সম্মেলনে উষ্ণতা রোধে কোনো বাস্তবসম্মত অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। বিশ্বের বৃহত্তম দুই হাজার পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে ১,১৪৫টি 'নেট জিরো' প্রতিশ্রুতি দিলেও গত বছর কার্বন নির্গমন শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হার বজায় থাকলে আগামী ৫০-৭৫ বছরের মধ্যে মালদ্বীপ ও সুন্দরবন সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে।
বাকু সম্মেলন ঘিরে আরেকটি বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—কেন দাতা ও গ্রহীতা উভয়েই এত উদাসীন? যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব সীমিত। একই সঙ্গে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশের সরকারপ্রধানেরা সম্মেলনে উপস্থিত হননি।
বাকু সম্মেলন তার উদ্দেশ্য পূরণে কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা তাদের প্রতিবাদ জানাতে পেরেছেন ঠিকই, তবে তাদের বার্তা বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। অর্থায়ন ও কার্যকর সমাধান নিয়ে দাতা ও গ্রহীতাদের উদাসীনতা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।