বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ রয়েছে। তবে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এই প্রতিবেদনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গভর্নরের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকেও সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গভর্নরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই বছরে মোট ২৬৮৮.৯১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২২.৬৮ শতাংশ বেশি।
ডিসেম্বর ২০২৪-এ একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬৩.৮৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য সরকার ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এর ফলে প্রবাসীরা হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এই প্রণোদনার কারণে বছরে সরকারের খরচ হচ্ছে ৭,০০০ কোটি টাকা।
গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর উল্লেখ করেন, রেমিট্যান্স প্রবাহে বর্তমানে দুবাই শীর্ষে উঠে এসেছে, যা সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, সৌদি আরব থেকে প্রবাসীরা অর্থ সরাসরি বাংলাদেশে পাঠানোর পরিবর্তে প্রথমে দুবাইয়ে পাঠাচ্ছেন এবং তারপর বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।
গভর্নরের মতে, দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে কারসাজি করার চেষ্টা করছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তিনি বলেন, "এই ধরনের মুদ্রা বিনিময় কারসাজি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।" তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকে।
গভর্নর আহসান এইচ মুনসুর ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, টাকা পাচার রোধ ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য সচেতনতা জরুরি। তিনি বলেন, "আমাদের অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থাপনায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এবং প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে উৎসাহিত করতে আরও উদ্যোগ নিতে হবে।"
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এই প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনার হার আরও বাড়িয়ে তাদের বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। দুবাইসহ অন্যান্য দেশে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে যে কারসাজি করা হচ্ছে, তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।অবৈধ উপায়ে টাকা পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুরের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রা বিনিময় কারসাজি বন্ধ এবং প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে হবে।
দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এ খাতের উন্নয়নে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।