বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর প্রেক্ষিতে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করতে হবে।
ডিএমপির এক অফিস আদেশে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসংক্রান্ত মামলাগুলোর অধিকাংশেই এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অনেক বেশি। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত বা তদন্তে শনাক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণ (যেমন: ভুক্তভোগীর বক্তব্য, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ভিডিও/অডিও/ছবি, মোবাইল কললিস্ট বা সিডিআর) উপস্থাপন করে অনুমতি নিতে হবে।”
এই নির্দেশনার মাধ্যমে পুলিশকে দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা সব সময় স্বচ্ছতার পক্ষে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড় না পান, তা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করছি।”
সাধারণত পুলিশ আইন অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজের বিচারবুদ্ধি অনুসারে আসামিকে গ্রেপ্তার ও প্রতিবেদন দাখিলের ক্ষমতা রাখেন। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলাগুলোর ক্ষেত্র ভিন্ন। কারণ, এসব মামলায় হাজার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই, অভিযোগ রয়েছে, আসামি ও গ্রেপ্তারের তালিকা বানিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী যে ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বা আশেপাশে অবস্থানকারী অনেক সাধারণ ছাত্র, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। এতে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গত ১০ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনাতেও বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে না।”
এছাড়া প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া গেলে তাদের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মামলা হলেই গ্রেপ্তার করতে হবে—এই নীতি থেকে পুলিশকে সরে এসে বিচার-বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
নতুন এই নির্দেশনা পুলিশের তদন্ত ও গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াকে আরও পেশাদার ও মানবিকভাবে পরিচালনার পথ উন্মুক্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটি রাজনৈতিক হয়রানি, গণগ্রেপ্তার এবং আইনের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।