দেশের আর্থিক সংকট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের অভাব, এবং বৈষম্য কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মাহমুদ বলেন, দেশের বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে অর্থ থাকলেও বাস্তবে তা দেশের বাইরে চলে গেছে। জনগণের গচ্ছিত অর্থ ব্যাংক ব্যবস্থায় রয়েছে, কিন্তু এ অর্থ দেশীয় সম্পদে রূপান্তরিত হয়নি। সম্পদের অভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বৈষম্য দূর করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় বাড়াতে করনীতিতে সংস্কার আনার তাগিদ দেন তিনি।
ড. মাহমুদ আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছর একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে, যা দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে।
সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ইন্ডারমিট এস গিল তার গবেষণাপত্রে মধ্য আয়ের ফাঁদ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় ৬০০ কোটি মানুষ মধ্য আয়ের ফাঁদের শিকার। এই ফাঁদ থেকে বের হতে মেধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ড. মাহমুদ বলেন, দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ শিক্ষক নেই। জেলায় জেলায় অবকাঠামো থাকলেও কারিগরি শিক্ষার সংকট কাটেনি। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হলেও দক্ষ অপারেটরের অভাবে এসব ব্যবহৃত হয় না।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন চার দিনের সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে প্রায় ৩০টি গবেষণাপত্র এবং ১২টি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, বৈষম্য দূর করতে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ড. মাহমুদ বলেন, ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে ৩০-৪০টি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও কোনো দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করেনি। আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সম্মেলনে বক্তারা বৈষম্য, মধ্য আয়ের ফাঁদ, এবং সম্পদের সংকট নিরসনে টেকসই নীতিমালা ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংযোগ জরুরি।