ভারত বাংলাদেশের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তারের জন্য আওয়ামী লীগকে ‘অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ভারত সব সময় আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখেছে। দুই দেশের সম্পর্ক জনগণ বা রাষ্ট্রের নয়; বরং এটি ‘ভারত এবং আওয়ামী লীগের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু ভারত সরকার দেড়যুগের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদের অস্বস্তির জায়গা সেখানেই।”
হাসনাত ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটি জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের হওয়া উচিত। বাংলাদেশ কোনো অন্যায্য সম্পর্ক মেনে নেবে না। জনগণের সরকার হিসেবে বর্তমান সরকার এমন সম্পর্ক পুনর্নবীকরণের সুযোগ দেবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের বিগত সময়ের করা ‘অসম চুক্তি’গুলো প্রকাশের আহ্বান। ফেলানীসহ সীমান্তে হত্যা এবং পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ব্যবস্থা গ্রহণ, বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।
হাসনাত উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আগরতলার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে হামলা, সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করছে। এই বিষয়গুলোতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং মুসলমান একসঙ্গে লড়াই করবে। ভারত যদি আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভর করে আবারো অন্যায্য সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, তাহলে তারা ভ্রান্তিতে আছে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতের প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত এলে আমরা একচুল পরিমাণও ছাড় দেব না। ন্যায্য সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং জনগণের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে সমতা প্রতিষ্ঠা করুন।”
এই বক্তব্য ও দাবির মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ন্যায্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।