মার্কিন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত সরকারি খরচ চালানোর জন্য একটি প্যাকেজ সহ বিল মার্কিন কংগ্রেসে খারিজ হয়েছে, যার ফলে ফেডারেল সরকার শাটডাউনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এই বিল পাস করার প্রয়োজন ছিল সরকারি খরচ চালানোর জন্য এবং শাটডাউন এড়ানোর জন্য, তবে ট্রাম্পের দলের রিপাবলিকান সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে এই বিল পাস করা সম্ভব হয়নি।
বিলের বিরুদ্ধে ৩৮ জন রিপাবলিকান সদস্য ভোট দেন, এবং অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট সদস্যও বিলটির বিরোধিতা করেন। এর ফলে, শুক্রবার রাতের মধ্যে নতুন প্রস্তাব পাস না হলে শনিবার থেকে সরকারি শাটডাউন শুরু হবে। শাটডাউনের ফলে সীমান্ত সুরক্ষা, চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা, এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মতো জরুরি সেবাগুলি চলমান থাকবে, তবে অনুমোদিত অর্থ না থাকার কারণে জরুরি নয় এমন সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে এবং অনেক সরকারি কর্মী বেতন পাবেন না।
প্রথমে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের সম্মতিতে একটি সাময়িক খরচ চালানোর প্যাকেজ নেওয়া হয়েছিল, তবে ট্রাম্প এবং তার সহযোগী ইলন মাস্ক সেই পরিকল্পনা খারিজ করে দেন। এর ফলে একটি নতুন প্যাকেজ নিয়ে আসা হয়, যা নিয়ে শুক্রবার ট্রাম্প জানান, তিনি এই নতুন পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন। নতুন পরিকল্পনায় দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকারের ঋণ সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকে।
ডেমোক্র্যাটরা নতুন প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের মতে, এই প্রস্তাব হাস্যকর এবং বাস্তবসম্মত নয়। ট্রাম্প তাদের চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে তারা নতুন পরিকল্পনাটি সমর্থন করে, এবং দাবি করেন যে এই পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য একটি ভালো ডিল নিয়ে আসা হয়েছে।
ট্রাম্পের সহযোগী ইলন মাস্কও এর আগে এই বিলের সমালোচনা করেন, যেখানে বেশ কিছু ব্যয়বহুল ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে মন্তব্য করেন এবং সতর্ক করেন যে, যারা এই বিল সমর্থন করবেন, তাদের আবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য কঠিন হতে পারে। এর পরেই ট্রাম্প বিলটির সমালোচনা করেন এবং হুমকি দেন যে, ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে বা পুরোপুরি সীমাহীন ঋণ গ্রহণের সুযোগ রাখতে হবে।
ট্রাম্পের দলের রিপাবলিকানরা তাড়াহুড়া করে একটি নতুন প্যাকেজ প্রস্তাব করে। এই প্যাকেজে ফেডারেল সরকারের তিন মাসের জন্য খরচ চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। এতে বিপর্যয় মোকাবিলা, কৃষি এবং খাদ্য সহায়তার জন্য যথাক্রমে ১০ হাজার কোটি ডলার এবং ১ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়। তবে, নতুন প্যাকেজে ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়, যা সরকারের জন্য ঋণ গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণ পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক এবং এই প্যাকেজ পাস হলে দেশের ঋণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের পক্ষে একটি নতুন প্যাকেজ প্রস্তাব করা হলেও, ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন না পাওয়া এবং রিপাবলিকানদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন সরকারের জন্য শাটডাউন এড়াতে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক অকার্যকারিতা সৃষ্টি করতে পারে, যা সরকারের বিভিন্ন পরিষেবা ও কর্মী কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পরিস্থিতি যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে শাটডাউন পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং দেশের সাধারণ নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।