বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপাতত মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলে তা ফেরত পাঠানো হয়। এতে জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই মুহূর্তে ভাতা দেওয়া সমীচীন নয়। পরিস্থিতি উন্নতি হলে এটি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুত করা খসড়া অনুযায়ী, সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে মূল বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ খাতে বার্ষিক খরচ হতো অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া চলমান বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মহার্ঘ ভাতা যোগ হলে এ ব্যয় দাঁড়াত ৯৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সরকারি ব্যয় সংকোচনের নীতির কারণে এ উদ্যোগ স্থগিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ব্যয় সংকোচনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ফলে এখন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া যৌক্তিক নয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এখন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিনা সুদে গাড়ির ঋণ এবং গাড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য বাড়তি ৫০ হাজার টাকা সুবিধাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এ অবস্থায়, মহার্ঘ ভাতা নিয়ে দাবি করার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হয়েছিল। এতে সরকারি চাকরিজীবীরা বেসরকারি খাতের তুলনায় ভালো বেতন কাঠামো পান। পাঁচ বছর পর নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার নিয়ম থাকলেও ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার মাধ্যমে কর্মীদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হলেও, বিশেষ সুবিধা হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। সম্প্রতি আরও ৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের পরিকল্পনা করা হলেও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এটি স্থগিত করা হয়।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূল্যস্ফীতির চাপে এই ভাতার ওপর ভরসা করছিলেন। এ উদ্যোগ স্থগিত হওয়ায় তাঁদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সংকটময় সময়ে সরকারি ব্যয় কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই দেশের জন্য মঙ্গলজনক। তবে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।