রাশিয়ার আকাশসীমায় আজারবাইজানের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপাতিত হওয়া একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন এক অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনা ইউক্রেনের ড্রোন হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে ভুলবশত ঘটে।
২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর, আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের অদূরে বিধ্বস্ত হয়, যার ফলে অন্তত ৩৮ জন আরোহী নিহত হন। উড়োজাহাজটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের রাজধানী গ্রোজনি যাচ্ছিল। যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে মোট ৬৭ জন আরোহী ছিলেন। এই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর, রাশিয়ার আকাশসীমায় ভুলবশত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন যে, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভুলভাবে এই যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।
ক্রেমলিন থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "রাশিয়ার আকাশসীমায় দুঃখজনক এ ঘটনার জন্য (প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমা চেয়েছেন।" রাষ্ট্রপতি পুতিন নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। এছাড়া, ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এটি জানানো হয়েছে যে, ওই সময় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে এই ভুলটি ঘটেছিল। বিশেষত, গ্রোজনি, মোজদোক, এবং ভ্লাদিকাভাকাজে ড্রোন হামলা চালাচ্ছিল ইউক্রেন। রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেই হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
আজারবাইজান সরকার এই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, এবং এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হওয়ার পেছনে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দায়ী। তবে এটি ভুলবশত ঘটে বলে দাবি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে শোকের ছায়া পড়েছে। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আরও সতর্কতার সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই দুর্ঘটনা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ঘটেছে। ইউক্রেনের ড্রোন হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভুলে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা প্রটোকলগুলো সম্পর্কে নতুন আলোচনা শুরু করেছে।
রাশিয়ার আকাশসীমায় আজারবাইজানের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা একটি হৃদয়বিদারক ট্র্যাজেডি, যা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এর ঘটনা আরও জটিলতা বাড়াতে পারে, তবে এটি নিশ্চয়ই সবার জন্য একটি শোক ও ভাবনার মুহূর্ত।