রাশিয়ার বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোরিয়া জিনস দেশটির অভ্যন্তরে তাদের কিছু উৎপাদন কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রমিক সংকট এবং কাঁচামালের গুণমানের সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তাদের উৎপাদনব্যবস্থা দেশের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে। ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তান এই সম্ভাব্য নতুন গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে।
গ্লোরিয়া জিনসের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হিসেবে রাশিয়ায় ক্রমবর্ধমান শ্রমিক সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে রাশিয়ায় শ্রমিক সংকট পূর্বের তুলনায় আরও বেড়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার তৈরি কাঁচামাল এবং আনুষঙ্গিক উপকরণের মান নিম্নমানের হওয়ায় পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেশে উৎপাদন চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
রাশিয়ার রস্তভ অঞ্চলে অবস্থিত কারখানাগুলো এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে সালস্ক শহরের একটি সেলাই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার কর্মীদের অন্য কারখানায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এই দেশগুলোতে তুলার ভালো উৎপাদন হয়, যা কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মতো দেশে বিশ্বমানের শিল্প সুবিধা বিদ্যমান। এই দেশগুলোতে শ্রমিক মজুরি রাশিয়া বা চীনের তুলনায় অনেক কম।
গ্লোরিয়া জিনস মনে করছে, এই দেশে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া হলে শ্রমিক সংকট, কাঁচামালের ঘাটতি এবং উৎপাদন খরচ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
একসময় চীন রাশিয়ার পোশাক প্রস্তুতকারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ছিল। তবে বর্তমানে রুশ ব্র্যান্ডগুলো চীনের দিকে আগ্রহ হারাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো চীনে শ্রমিক মজুরি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।
ফ্যাশন শিল্পের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চীনের তুলনায় বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানে উৎপাদন অনেক সাশ্রয়ী। এ কারণেই গ্লোরিয়া জিনসের মতো কোম্পানিগুলো উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
গ্লোরিয়া জিনস রাশিয়ায় মোট ১৮টি কারখানা পরিচালনা করে। এই কারখানাগুলোতে পোশাক এবং জুতা উৎপাদন করা হয়। তবে শ্রমিক সংকট এবং কাঁচামালের নিম্নমানের কারণে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে উৎপাদন বন্ধের ফলে রস্তভ অঞ্চলের কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোতে উৎপাদন স্থানান্তর করলে এই প্রতিষ্ঠানটি খরচ কমাতে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে পারবে।
গ্লোরিয়া জিনসের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার পোশাক শিল্পে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। দেশের অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে সংকট এবং কাঁচামালের নিম্নমান রাশিয়ার পোশাক শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এই সংকট মোকাবিলা করতে গ্লোরিয়া জিনসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সাশ্রয়ী এবং স্থিতিশীল উৎপাদনের জন্য বিদেশমুখী হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম এবং উজবেকিস্তান এই সংকটের সুফল পেতে পারে।
সুত্র: