যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন রূপ নিচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, চীন যদি তাদের আরোপিত পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই শুল্ক কার্যকর হলে নির্দিষ্ট কিছু চীনা পণ্যে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক দেয়, তাহলে তার জবাবে আরও বেশি হারে শুল্ক দেওয়া হবে।”
চীনের প্রতিক্রিয়া ছিল কড়া। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের হুমকিকে “ভুলের ওপর ভুল” বলে অভিহিত করেছে এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা এই শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণকে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ বলেও অভিহিত করেছে।
চীনের অবস্থান হলো—দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক এবং নতুন করে আর কোনো শুল্ক আরোপ না করা হোক। চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ‘পারস্পরিক সুবিধা’র নামে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এটি এক ধরনের একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ এবং অর্থনৈতিক নিপীড়ন।”
চীন এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের জবাবে সমপরিমাণ পাল্টা শুল্ক দিয়েছে।
এই শুল্ক যুদ্ধের আশঙ্কা ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। নতুন শুল্ক ঘোষণার পরপরই বিশ্বজুড়ে বড় বড় শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। লন্ডনের FTSE 100 সূচক ৪ শতাংশের বেশি কমেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক একদিনেই ১৩ শতাংশ পড়ে গেছে, যা ১৯৯৭ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন। মার্কিন ও ইউরোপীয় বাজারগুলোতেও বড় ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ট্রাম্প জানান, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে, এবং সেই চাপ সামলাতেই তিনি এই শুল্ক নীতি আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে চান।
তিনি বলেন, “আমরা কিছু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পারি, কিন্তু কিছু শুল্ক স্থায়ী হতে পারে। এখন সময় আমেরিকা ফার্স্ট নীতির।”
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে বিশ্ব অর্থনীতি আরও বড় সংকটে পড়তে পারে। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী শিল্প, আমদানি-রপ্তানি খাত এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।