জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং তার ক্যারিয়ারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি তার অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছেন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ন্যান্সি উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে প্রজাপতি সিনেমার 'দু দিকেই বসবাস' গানটির জন্য তিনি সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তবে, ২০১৩ সালের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তার বড় কন্যার অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি এবং পরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার সংগ্রহ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের শেষের দিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন, যা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। তিনি লেখেন, “শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য যারা আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন, তাদের সময় এখন ফিরে আসার।” তার এই পোস্ট রাতারাতি ভাইরাল হয় এবং এর একদিন পরেই মধ্যরাতে তার নেত্রকোনার বাড়ি ঘেরাও করা হয়।
ন্যান্সির দাবি, তার মা নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সালে পুলিশ তার বাড়ি ঘেরাও করে এবং জানায় যে তাদের কাছে খবর আছে, ওই বাড়ি ‘জঙ্গি আস্তানা’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুলিশ বাড়ি তল্লাশির চেষ্টা করে এবং তার ছোট ভাইকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। তবে, তর্ক-বিতর্কের পর পুলিশ ফিরে যায়। এ ঘটনার পর তিনি একটি প্রেস কনফারেন্স করে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
২০১৪ সাল থেকে একের পর এক স্টেজ শো বাতিল হতে থাকে বলে অভিযোগ করেন ন্যান্সি। সিনেমার গান গাওয়ার সুযোগও কমে যায়। তিনি দাবি করেন, তার ৩০ লাখ ফলোয়ারের ফেসবুক পেজও হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়। নতুন করে যে আইডি খুলতেন, তাও কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যেত।
ন্যান্সি জানান, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সমর্থক হওয়ায় তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে থাকেন এবং তার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া নিয়েও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। তিনি লেখেন, “ওদের ভাব এমন যেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি আমার অর্জন নয়, শেখ হাসিনা বুঝি ভিক্ষা দিয়েছেন!”
ন্যান্সি তার স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালে তিনি ব্যাপক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। পুলিশ ভ্যান প্রতিদিন তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত, যা তাকে চরম হতাশায় ফেলে। একপর্যায়ে তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি লেখেন, “শেখ হাসিনার মব বাহিনীর সে কি কুৎসিত উল্লাস!”
২০১৫ সালের পর ন্যান্সি নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, সিডি চয়েসের ব্যানারে একাধিক গান প্রকাশ করেন এবং সাউন্ডটেকের ব্যানারে একক অ্যালবাম 'ভালোবাসো বলেই' মুক্তি পায়। এছাড়া গাংচিল মিউজিক, বাংলা ঢোল, রঙ্গন মিউজিক, সিএমভি, প্রো টিউন এবং অনুপমের ব্যানারে কাজ করতে থাকেন।
ন্যান্সি অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের পর থেকে টিভি চ্যানেলগুলো তাকে ডাকতে অনীহা দেখাতে থাকে। তিনি জানান, শুধুমাত্র বাংলাভিশন তাকে নিয়মিত গান গাওয়ার সুযোগ দেয়। তার দুই ভাই বাংলাভিশনে কর্মরত থাকায় হয়তো সে সুযোগ পেয়েছিলেন।
তিনি জানান, গত ১১ বছরে তিনি মাত্র ১১টি সিনেমার জন্য গান গেয়েছেন। ২০১৪ সালের পর সিনেমার গানে তার জনপ্রিয়তা কমে যায় এবং তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হননি। তিনি জোরালোভাবে বলেন, “হাসিনা বাহিনীর রোষানলে পরা ব্ল্যাকলিস্টেড আমি টিকে ছিলাম এবং টিকে আছি আমার মনোবল ও ভক্ত শ্রোতাদের ভালোবাসায়।”
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিজের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার কাজের সুযোগ পাচ্ছেন এবং তার অতীত বঞ্চনার কথা প্রকাশ্যে আনতে পারছেন।