বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক বেশ আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে তাকে পদত্যাগের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বারবার তার মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি জানানো হচ্ছে।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ওপর দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে লেবার পার্টি সরকারও এখন চাপের মুখে রয়েছে।
বাংলাদেশে ৯টি প্রকল্পে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা এবং শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাস থেকেই এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। ২০০৮ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়।
গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে একটি ফ্ল্যাটের মালিক। ২০০৪ সালে ওই ফ্ল্যাটটি তিনি বিনা মূল্যে পেয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। আবদুল মোতালিফ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
এই অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ নিজেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের আদর্শ মানদণ্ড পরামর্শদাতার কাছে তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, কোনো অনিয়ম করেননি এবং স্বচ্ছতার জন্যই নিজ থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রিসভায় অবস্থান নিয়ে এখনো প্রশ্ন উঠছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন বলেন, টিউলিপ অভিযোগের বিষয়ে সঠিক কাজটি করেছেন। তিনি নিজ থেকেই তদন্তের কথা বলেছেন, যা পরিস্থিতি মোকাবিলার যথাযথ পদ্ধতি।
তবে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপের পদে থাকার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছে। দলটির অর্থবিষয়ক মুখপাত্র মেল স্ট্রাইড টাইমস রেডিওকে বলেন, টিউলিপের দায়িত্ব পালন করা এখন আর সঠিক নয়। তিনি একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, অথচ তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিরোধী দলের নেতারা বারবার দাবি করছেন, টিউলিপকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। তাদের মতে, একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ গুরুতর এবং তার বর্তমান পদে থাকা অনুচিত।
টিউলিপ সিদ্দিকের পদ নিয়ে বিতর্ক ও তদন্ত চলমান থাকলেও, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি সরকার এখনো তাকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিরোধীদের চাপ ক্রমেই বাড়ছে, যা লেবার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।