আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ পাঁচ বছরে (২০১৯-২০২৩) দেশে অপরাধের হার ছিল উদ্বেগজনক। পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এই সময়ে দেশে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে বিপুল সংখ্যায়।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে ১৬,৫৫৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯টির বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। বছরে গড়ে খুনের সংখ্যা ছিল ৩,৩১১টি। এমনকি করোনা মহামারির সময়ও (২০২০) খুনের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজার।
পাঁচ বছরে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৯,৯৫৫টি এবং ডাকাতির মামলা হয়েছে ১,৬৮৫টি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ ভুক্তভোগীরা অনেক সময় মামলা করতে চান না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পুলিশও ডাকাতির ঘটনা চুরি হিসেবে মামলা নেয়।
এই সময়ে দেশে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২,৪৫২টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১,০৭,১২৪টি। ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়, যা এই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত।
পাঁচ বছরে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩,১৫,০০০টির বেশি। একই সময়ে চোরাচালানের অভিযোগে মামলা হয়েছে প্রায় ১৪,০০০টি এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মামলা হয়েছে ৯,০০০টির বেশি।
২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেও অপরাধের হার ছিল উল্লেখযোগ্য। খুনের ঘটনা ঘটেছে ১,৫৩৩টি। এছাড়া ১৮৩টি ডাকাতি, ১,২২২টি ছিনতাই, এবং ২৮১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এই সময় নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ৯,০০০ মামলা এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধারে ৩৩,০০০ মামলা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে পুলিশের নির্বিচার গুলির কারণে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। আগস্ট মাসে খুনের ঘটনা ঘটে ৬১৮টি। একই সময়ে ২০৩টি ছিনতাই, ৫৯টি অপহরণ এবং ১,০০০টির বেশি চুরির মামলা হয়।
গত ১৫ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চলতি বছরের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সারা দেশে ২৩৭টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৭টি ঢাকায়।
পুলিশের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে গত পাঁচ বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল। বিশেষ করে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন এবং মাদকের বিস্তার প্রতিরোধে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।