বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিতর্কিত তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এসব প্রতিবেদন সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রকৃত চিত্রকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
ঐক্য পরিষদের দেওয়া প্রতিবেদনগুলোতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। নেত্র নিউজসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলো নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। নেত্র নিউজ দাবি করেছে, অনেক ঘটনায় রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা অন্যান্য কারণ থাকলেও তা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার করা হয়েছে।
এমন বিতর্কিত প্রতিবেদনের প্রভাব কেবল দেশের অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। ব্রিটিশ সংসদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।
আমরা স্বীকার করি, বাংলাদেশ এখনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে একটি আদর্শ অবস্থায় পৌঁছায়নি। ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং সংঘাতমুক্ত সমাজ গঠনে অনেক কাজ বাকি। কিন্তু তাই বলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রশ্ন হলো, এই ধরনের বিভ্রান্তি রোধে কী করা উচিত?
১. তথ্য যাচাই: গণমাধ্যম ও সংগঠনগুলোর উচিত তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো গভীরভাবে যাচাই করা। সাংবাদিকতার নীতি মেনে সঠিক তথ্য তুলে ধরা অপরিহার্য।
২. স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা: সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উচিত তাদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন প্রণয়নের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
৩. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ: সরকার, সুশীল সমাজ এবং নাগরিক সংগঠনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় সঠিক তথ্য সরবরাহ ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সংগঠনের ভূমিকা: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলোকে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী সমাজ। এখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাসের দাবি রাখে। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচার নয়, প্রয়োজন বাস্তব চিত্র তুলে ধরা ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ঐক্য পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা।
আসুন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তি আরও দৃঢ় করি।