দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে এবং একে প্রতিপক্ষের লড়াই হিসেবে দেখা উচিত নয়।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) আয়োজিত এ দুই দিনব্যাপী সংলাপের প্রথম দিনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যদি ছকে ফেলা রাজনীতিকে বদলানোর চেষ্টা করি বা বৈষম্য ভাঙার কথা বলি, তা কখনোই সহজ হবে না। এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে ধৈর্য প্রয়োজন।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামো এক দিনে ভাঙা সম্ভব নয় এবং পরিবর্তনের দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের।
তিনি বলেন, "শুধু কাগজে-কলমে সংস্কার করলে হবে না। এর কার্যকর চর্চার মাধ্যমেই মানুষ সুফল পাবে। রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা সেখানে অপরিসীম।" পাশাপাশি তিনি নেতৃত্বের মানসিকতা পরিবর্তনের উপরও গুরুত্বারোপ করেন। ক্ষমতার প্রয়োগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া কখনোই ঠিকভাবে চর্চা করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানের প্রসঙ্গ তুলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "৩-৪ আগস্টের আগে এ ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনুমান করা কঠিন ছিল।" বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে উদ্বেগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, "এবার সংস্কার প্রশ্নে পিছপা হলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। আবার সংস্কারে জনমতের প্রতিফলন না ঘটাতে পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে।" তিনি আরও যোগ করেন, শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন করলেই সব সমস্যা সমাধান হবে না; মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, "সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে ছাড় দিতে হবে।" তিনি বলেন, বড় ধরনের পরিবর্তন তারুণ্যই আনতে পারে। তবে পরিবর্তন একটি প্রক্রিয়া এবং কেবল আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই তা সম্ভব নয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা উভয়েরই ভূমিকা থাকা উচিত।
তিনি আরও বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সংস্কারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত না করি এবং এর কার্যকর চর্চা শুরু না করি, ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বের সেরা আইনও কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, মনোজাগতিক পরিবর্তন এবং কার্যকর চর্চার মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব।
সংলাপে উঠে আসা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে স্পষ্ট যে, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করা ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। এ প্রক্রিয়ায় তারুণ্য, অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।