বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশ রক্ষায় যাতায়াত ও ভ্রমণে আরোপিত বিধিনিষেধ নিয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করেছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল কবীর।
এর আগে ১৮ অক্টোবর, সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেক পরিবেশ সচিবের কাছে একটি আবেদন দায়ের করেন, যাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াতের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের উপস্থিতিতে নভেম্বরে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যেখানে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল, পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে দিনের বেলা ভ্রমণ করতে পারবেন, তবে রাত্রীযাপন করতে পারবেন না।
এছাড়া, প্রতিদিন ২০০০ জনের অধিক পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন না এবং আলোকসজ্জা বা বারবিকিউ পার্টির মতো অনুষ্ঠান আয়োজনও নিষিদ্ধ করা হয়। আব্দুল মালেক অভিযোগ করেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর ফলে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে অনেকেই বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার দাবি ছিল, পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নতির পরিবর্তে এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে সংকটে পড়েছে।
আবদুল মালেকের আবেদনের পরেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তবে মঙ্গলবার হাইকোর্ট এ রিট খারিজ করে দিয়েছেন। আদালত জানিয়েছে, পরিবেশ রক্ষা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আরোপিত বিধিনিষেধ জরুরি ছিল। আদালত বলেন, এসব নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব ফেলবে না, বরং পরিবেশ সংরক্ষণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। বছরের পর বছর ধরে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে দ্বীপটির পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিশেষ করে, সেন্টমার্টিনে পরিবেশগত বিপদ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে কিছুটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
পর্যটন নিষেধাজ্ঞার ফলে দ্বীপটির স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কর্মসংস্থান সংকটে পড়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে। তবুও, পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পর্যটন খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা একদিক থেকে সত্যি, তবে পরিবেশ রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োজনীয় হতে পারে। সেন্টমার্টিনের মতো একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে গিয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা কোনোভাবেই অন্যায্য হতে পারে না। ভবিষ্যতে যদি এ অঞ্চলের পরিবেশ আরো উন্নত করা যায়, তবে পর্যটন খাতের সামগ্রিক উন্নতি এবং স্থানীয় জনগণের জন্য উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হবে।
হাইকোর্টের রিট খারিজের পর, এখন সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াত ও ভ্রমণে বিধিনিষেধের বিষয়ে সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে পরিবেশ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নতি পাশাপাশি সম্ভব হয়।