বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বাগেরহাটে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, রামপাল, কচুয়া, চিতলমারীসহ ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে চলে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮১.৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা বর্ষণের ফলে জেলার চিংড়ি শিল্প ও কৃষি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সদর, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় ৯১৫টি চিংড়ি ঘের এবং ১৭৭টি মাছের পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ চিংড়ি মাছ, ১৩ লাখ চিংড়ি পোনা ও প্রায় ৫ টন বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এখনো বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলাগুলোতেও চিংড়ি ঘের ও মাছের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, “এ অবস্থায় মৎস্য খাতকে বাঁচাতে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সহায়তা প্রয়োজন।”
এছাড়া, টানা বৃষ্টিতে কৃষি খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন জানান, ১,৩৭৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১,০৭৪ হেক্টর আউশ ধান, ২৫৩ হেক্টর বীজতলা, ৯ হেক্টর পান এবং ৪০ হেক্টর জমির মরিচ, কলা, আখসহ নানা ধরনের সবজি।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, “এখনো বৃষ্টিপাত চলছে। ইতোমধ্যে জেলার ৯টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাগেরহাটে এই পরিস্থিতি উত্তরণে প্রশাসন, মৎস্য ও কৃষি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি বৃষ্টিপাত দীর্ঘস্থায়ী হয়।