জাতিসংঘের প্রোটেকশন অ্যান্ড ইউজ অফ ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটারকোর্সেস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লেকস ইউএন ওয়াটার কনভেনশন-এ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০ জুন এ যোগদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এবং বিশ্বে ৫৬তম দেশ হিসেবে এই আন্তর্জাতিক চুক্তির সদস্য হলো।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পানির চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা এখন অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও জানান, এই কনভেনশন দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর পানি নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডেল্টা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (জিবিএম) নদীসহ ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী। এসব নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনা পানি নিরাপত্তা, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা প্রবেশ এবং প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের অভাব একটি টেকসই ও যৌক্তিক পানি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
জাতিসংঘ পানি কনভেনশন আন্তঃসীমান্ত ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিস্তৃত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করে। বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকেই এই কনভেনশন কার্যক্রমে যুক্ত এবং ২০২৪ সালে স্লোভেনিয়ায় আয়োজিত দশম বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘ ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনের (UNECE) নির্বাহী সচিব তাতিয়ানা মলসিয়ান বলেন, “বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বড় অগ্রগতি। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু চাপে এটি একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক হাতিয়ার।”
পানি কনভেনশনের সেক্রেটারি সোনিয়া কোয়েপেল বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকেও আহ্বান জানাই এই কনভেনশনে যুক্ত হওয়ার জন্য।”
তিনি ২০২৬ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী জাতিসংঘ পানি কনফারেন্সে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বাস্তবায়নে জাতিসংঘের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন ও গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তিসহ একাধিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কাঠামো বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া নেপাল, চীন ও ভূটানের সঙ্গেও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা চলমান।