ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মন্তব্য করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা কিংবা জাতি গঠনের বিষয়ে খুব সামান্যই আগ্রহ দেখাচ্ছে। তার মতে, ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে এখন ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক মূলত বাণিজ্য এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটেই সীমাবদ্ধ।
ফরেন পলিসির সাউথ এশিয়া ব্রিফ-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে কুগেলম্যান বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যকার ফোনালাপে এই কৌশলগত অবস্থানের ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। দুই পক্ষের বিবরণ থেকে বোঝা যায়, তারা অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো চীনের প্রভাব মোকাবেলা। এ ধরনের কৌশলিক অবস্থান বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে বাংলাদেশ ৩৭ শতাংশ মার্কিন শুল্কের সম্মুখীন হবে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে, যেখানে দেশটি বড় পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনে সেই কৌশল টিকে থাকবে কিনা, তা নিয়ে কুগেলম্যান সন্দিহান।
কুগেলম্যান মনে করেন, ইউনূস-রুবিওর ফোনালাপ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের রূপরেখা নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এটি ছিল দ্বিতীয় ট্রাম্প মেয়াদের সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা।
এর আগে বাইডেন প্রশাসনের শেষ মাসগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র কারিগরি ও উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
ইউনূস-রুবিওর ফোনালাপের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন শুল্ক সংকট মোকাবেলায় এক জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির আওতায় বাংলাদেশ থেকে আমদানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে, যা নিয়ে আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।