প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১৬, ২০২৫, ৫:০৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৬, ২০২৫, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
অবশেষে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় বহুল আলোচিত পালাতক বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল কে জেলা প্রশাসকের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে (১৬ জুন ) সোমবার অপসারণ করে প্রসাশক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আরিফুল ইসলাম।
জান যায়, গত বছর ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল । বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা তাকে অপহরণের দাবিতে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করে ছিল জেলা প্রশাসক বরাবর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের পূর্বে বিএনপি'র কর্মীদের উপর হামলা, নাশকতা ও হত্যা মামলার কারণে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের এই চেয়ারম্যান । ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল । অবশেষে তাকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক সেনা সদস্য, বারাকপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনসার শেখকে হত্যা , বারাকপুর বৃদ্ধা আশ্রমের বৃক্ষ কর্তন, হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল , সন্ত্রাসী বাহিনীর পৃষ্টপোষকতা ও আই এফ আইসি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪কোট ১৪ লক্ষ্য টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে,। দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ তলা আলিশান অট্টালিকা তৈরি করেছেন এই চেয়ারম্যান। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে নিয়ে গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক সংগঠন গুলি।
বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা ক্যাডার বাহিনী এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর হামলা, মামলা এবং নির্যাতন চালিয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এবং নন্দন প্রতাপ ও আবালগাতির মধ্যবর্তী স্থানে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল ও যোগীপল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকন । দখলকৃত জমিতে বালু ভরাট করা হয়েছে । স্থানীয়দের অভিযোগ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি তত্কালীন সময়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের বহুল আলোচিত ও হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পলায়নের সাথে সাথে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান ইউপি চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে বারাকপুর ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী, বারাকপুর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোঃ আনসার শেখ হত্যা মামলা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ নিহত আনসারে পুত্র তানভীর শেখ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং -১৭ । সর্বশেষ ঢাকার পল্টন থানার মামলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হাতে গত বছর ২১ অক্টোবর ঢাকায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে গ্রেফতার হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন খুলনার দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এইচ এম শাহীন ।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪ জন চেয়ারম্যান অনিয়ম , দুর্নীতি , হত্যা ও ফৌজদারি মামলার কারণে ৫ আগষ্টের পর থেকে আত্নগোপনে চলে গেছেন। আওয়ামী লীগের আত্নগোপনে থাকা চেয়ারম্যান গাজিরহাট ইউপির মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু, বারাকপুর ইউপির গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল, সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জিয়াউর রহমান জিয়া, যুগিপোল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। এ সকল চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার , স্বেচ্ছাচারিতা , জ্ঞমি দখল, হত্যা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক সংগঠন গুলি।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখতে দ্রুত আত্নগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের ৪ ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩ 'জনকে ইতিমধ্যে অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অতিদ্রুত ফৌজদারি মামলার আসামি ও সেনহাটি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া গাজীকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে ইউনিয়ন বাসীর সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
বারাকপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা কামরুল ইসলাম বলেন , চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছিল না। দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে আমরা ইউপি সদস্যরা সম্মিলিতভাবে লিখিত অনাস্থা দাখিল করেছিলাম। ইউপি চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেলকে অপসারণের
মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার আরিফুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসকের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার পুষ্পেন্দু দাস কে প্রসাশকের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।