আজকের পৃথিবীতে ধনসম্পদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন এলন মাস্ক ও জেফ বেজোস। একজন স্পেসএক্স ও টেসলার কর্ণধার, অন্যজন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্লু অরিজিনের নির্মাতা। দুইজনই একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। বর্তমানে এলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার এবং জেফ বেজোসের সম্পদ প্রায় ১৯ হাজার কোটি ডলার।
এমন সময়ে, আলোচনায় উঠে এসেছে আরও একটি নাম—সাতোশি নাকামোতো। যিনি হয়তো হবেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক, কিন্তু যাঁর পরিচয়ই আজও রহস্যাবৃত।
সাতোশি নাকামোতো ২০০৯ সালে চালু করেছিলেন বিটকয়েন নামের বিকেন্দ্রিত ডিজিটাল মুদ্রা। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র প্রযুক্তিবিদদের মাঝে সীমিত থাকলেও, বিটকয়েন ধীরে ধীরে পরিণত হয় এক বৈশ্বিক সম্পদে।
সাতোশি নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন প্রায় ১০ লক্ষ বিটকয়েন।
বর্তমানে প্রতি বিটকয়েনের দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ডলার। এই মূল্য যদি ভবিষ্যতে ১০ লক্ষ ডলারে পৌঁছে যায়, তবে সাতোশির সম্পদের মূল্য দাঁড়াবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার—তাও কল্পিত শেয়ারের মূল্য নয়, বরং লিকুইড ডিজিটাল সম্পদ।
সাতোশির ওয়ালেটগুলো আজও অক্ষত ও অচল। এই বিটকয়েন কখনোই খরচ করা হয়নি। তাই কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন—তিনি হয়তো মৃত, বা ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পদ স্পর্শ করেননি যেন বিটকয়েনের মূল্য ধসে না পড়ে।
‘সাতোশি নাকামোতো’ নামটি হতে পারে একটি ছদ্মনাম। কেউ জানে না তিনি একক ব্যক্তি, না একটি প্রযুক্তিবিদদের দল। সম্ভাব্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন: Hal Finney (প্রথম বিটকয়েন লেনদাতা), Nick Szabo (Bit Gold স্রষ্টা), Adam Back (Hashcash উদ্ভাবক)।
কিন্তু কেউই সরাসরি দায় স্বীকার করেননি। এমনকি NSA (যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা) সাতোশিকে শনাক্তে ব্যর্থ হয়েছে।
বর্তমানে এলন মাস্কের সম্পদ টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক ও এক্স-এ বিনিয়োগকৃত শেয়ারের মূল্যনির্ভর। তবে এই সম্পদ মূলত স্টকের উপর ভিত্তি করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি, SpaceX মহাকাশ ভ্রমণে বাণিজ্যিক সফলতা পায়, AI ও অটোমেশন বাজারে টেসলার আধিপত্য তৈরি হয়, Neuralink মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেসে বিপ্লব আনে, তবে ৫–৭ বছরের মধ্যে এলন মাস্ক হতে পারেন প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার অর্জনকারী ব্যক্তি।
বর্তমানে OpenAI, Anthropic, xAI (মাস্কের AI প্রতিষ্ঠান) এবং Google DeepMind-এর মতো কোম্পানিগুলোর মূল্য দ্রুত বাড়ছে। যেকোনো নতুন AI প্ল্যাটফর্ম বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিজয়ী হলে তার প্রতিষ্ঠাতাও হতে পারেন ভবিষ্যতের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক।
ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা, বিটকয়েনের মূল্য অস্থিতিশীল। বড় হ্যাকার আক্রমণ বা নিষেধাজ্ঞায় মূল্য পড়ে যেতে পারে।মাস্কের সম্পদ স্টক-নির্ভর। বাজারে পতন হলে তার সম্পদ দ্রুত কমে যেতে পারে। সাতোশির বিটকয়েন ওয়ালেট যদি সচল হয়, তা বিশাল মুদ্রা বাজার সংকট তৈরি করতে পারে।
যখন আমরা ভাবি, "কে হবেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার?" তখন কেবল একজন ধনী ব্যক্তি নয়, বরং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক শক্তির রূপই সামনে আসে।
এটা হতে পারে, একজন উদ্ভাবক (এলন মাস্ক), একজন প্রযুক্তিগত দার্শনিক (সাতোশি নাকামোতো), কিংবা ভবিষ্যতের AI বা Web3 নেতা।
তবে ইতিহাসের পাতায় প্রথম "ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাব"-এ নাম লেখানো ব্যক্তি হতে পারেন সেই নিঃশব্দ, অজানা এবং রহস্যময় সাতোশি নাকামোতো—যিনি হয়তো মানবজাতির সবচেয়ে মূল্যবান ডিজিটাল সম্পদ সৃষ্টি করেও নিজেকে আড়ালে রেখেছেন।
আপনি যদি প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে ‘সাতোশি নাকামোতো’ নামটি মনে রাখতেই হবে। কারণ ভবিষ্যতের ধনের সংজ্ঞাই হয়তো বদলে যাবে তার হাত ধরেই।