চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। অক্টোবর মাসজুড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ যেখানে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, নভেম্বরের শুরুতেই সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকার ঘরে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানি বন্ধ থাকা ও দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়া এই দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ আড়ত থেকে জানা গেছে, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মান ও আকারভেদে ৯২ থেকে ১০০ টাকায়। মাত্র এক মাস আগেও এই দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। বর্তমানে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, “এখন বাজারে পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ চলছে। দাম এই মাসে কিছুটা বেশি থাকবে। সরকার যদি দ্রুত আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে বাজারে স্বস্তি ফিরবে। নইলে ডিসেম্বরের আগাম পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত দাম উচ্চ থাকবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার টন, যেখানে আগের বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন। অর্থাৎ আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
বেশিরভাগ পেঁয়াজই আসে ভারত থেকে, আর এই বছরও আমদানির ৯৯ শতাংশ ভারতীয় পেঁয়াজ। গত বছর ভারতে দাম বাড়ায় বাংলাদেশের বাজারও অস্থির হয়ে পড়ে। দেশীয় উৎপাদন বেড়ে গেলে আমদানির অনুমতি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে এপ্রিল ও আগস্টে দাম বাড়লে সরকার আবার আইপি (Import Permit) দেয়।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, “বর্তমানে বাজারে সাময়িক চাপ তৈরি হয়েছে। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন, যা ইতিবাচক দিক। ডিসেম্বরের আগাম ফসল ও ফেব্রুয়ারির নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম স্থিতিশীল হবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় গত অর্থবছরে ৯১ হেক্টর জমিতে ৬৭১ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ হেক্টরে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯২ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্থানীয় উৎপাদনই চট্টগ্রামের বাজারের বড় অংশ পূরণ করতে পারে।
তবে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, “৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দাম সহনীয় হলেও এক লাফে ২০ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”