বর্ষায় চারিদিকে থৈ থৈ করছে পানি। মাঠ-ঘাট বিল-বাওড় ডুবে একাকার। ভেসে গেছে চাষের পুকুরের ছোট পোনাসহ রেনু মাছও। এসব মাছ ধরতেই এক শ্রেনীর মানুষেরা ব্যবহার করছে জলজ পরিবেশ বিধ্বংসী চায়না দুয়ারী জাল। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নদী, খাল-বিলে এখন চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল বা ফাঁস জালে সয়লাব। এ চায়না দুয়ারী বা কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না কেউই। উপজেলা শহরসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ওই জাল। এসব প্রতিরোধে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বার বার অভিযানে জাল আটক, মামলা ও জরিমানা আদায় করলেও তা পূনরায় বিক্রয় বা ব্যবহার যেন কমছেই না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছ ধরায় ব্যবহৃত কারেন্ট জালের থেকেও ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী জাল। এই জালে মাছের রেণু পোনা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব রকম সাইজের মাছ ধরা পড়ে। এমনকি এ জালে জলজ প্রাণীসহ কীট-পতঙ্গও রেহাই পায় না। বিশেষ করে দেশি প্রজাতির মাছের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর এই জাল। গ্রামাঞ্চলের লোকজন জেনে না বুঝেই এই জাল ব্যবহার করাতে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য ভান্ডারের ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে। ৫০ থেকে ১'শ ফুট লম্বার চায়না দুয়ারী এ জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় তা খুব সহজেই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। একেবারে মিহি বুননের ছোট ফাঁস বিশিষ্ট এই জালটি কপাটের মত কাজ করে। নদীতে বাঁশের লাঠির সাথে বেধে পাতা হয় ফাঁদ। এতে ছোট ছোট রেনু পোনা এমনকি মাছের ডিমও জালে আটকে পড়ে।
এখন ভরা বর্ষা মৌসুম। এবারে লাগাতার ভারী বর্ষনে কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় সকল খাল-বিল পুকুরে পানিতে টুইটুম্বুর। সরেজমিনে ওইসব অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্থানেই কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসব চলছে। উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত চিত্রা ও বেগবতী নদীসহ বিভিন্ন খালে-বিলে চায়না দুয়ারী জালে এখন সয়লাব। এ উপজেলার মধ্যে অন্যতম নাটোপাড়া বিলটি বেশ বড় ও মাছের জন্য বিখ্যাত। এবারের বর্ষায় এ বিলে পানি বাড়ার সাথেই বেড়েছে রেনু চারা পোনা, পুটি, কই, টেংরা, টাকি ও শিং মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছগুলি ২/১ মাসের ব্যবধানে বড় হবে। কিন্তু এক শ্রেনীর মাছ শিকারীরা ওই বিলে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে উঠেছে। তারা অবৈধ জাল পেতে বিল, নদী ও খাল-থেকে মাছ ধরে বিক্রি করছে বাজারে।
বিল পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ইয়াকুব আলী সহ একধিক ব্যাক্তি জানান, প্রতিনিয়ত কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করাতে অল্প দিনেই এ বিলে আর দেশীয় মাছ পাওয়া যাবেনা। তারা জানান, কালীগঞ্জ শহরের বড় বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় এই সব অবৈধ জাল বিক্রি করে থাকেন। এটি বিক্রয় বন্ধ না করতে পারলে অচিরেই মাছের বংশ ধবংস হবে বলে তাদের অভিমত।
নাটোপাড়া গ্রামের ইমন হোসেন বলেন, এখন দেশীয় প্রজাতির প্রায় সকল মাছের পেটে ডিম রয়েছে। বিলে নদীতে কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জালে ঝাকে ঝাকে ডিমওয়ালা দেশি মাছ আটকা পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশি মাছের বংশ বিস্তার হবে না। এজন্য কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জাল বিক্রি ও ব্যবহারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান তারা।
এসব প্রতিরোধের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল আটকে আমাদের অভিযান কার্যক্রম চলমান আছে। কিন্তু, জনবল সংকটের কারনে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয়না। তারপরও নির্দিষ্ট তথ্য পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করেন বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উপজেলা মৎস অফিসকে সাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন বাজার ও নদীতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। একাধিকবার অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ কারেন্ট জাল আটক ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে ওইসব জাল বিক্রির চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তিনি বলেন, অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রি ও ব্যবহারে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে।