বৈরী আবহাওয়া ও মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তাল রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। অতিরিক্ত জোয়ারে প্রতিনিয়ত পানি ঢুকছে লোকালয়ে, আর উত্তাল ঢেউয়ে উপকূলজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। বেলাভূমির বিভিন্ন পয়েন্টে ভেঙে পড়েছে হাজারো ঝাউগাছ, তলিয়ে গেছে পর্যটন কাঠামো, দোকানপাট, পুলিশ বক্স এবং ওয়াচ টাওয়ার।
লাইফ গার্ড কর্মী মুহাম্মদ ওসমান জানান, জোয়ারের পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় জিও ব্যাগও ঢেউ ঠেকাতে পারছে না। ঢেউয়ের তীব্রতায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে বালি সরে গিয়ে গাছ উপড়ে পড়ছে। পর্যটকদের পানিতে নামা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বিচ এলাকায় নিয়মিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, লাবণী, সুগন্ধা, শৈবাল, কলাতলী, কবিতা চত্বরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সৈকতের বেলাভূমি মারাত্মক ভাঙনের কবলে পড়েছে। শৈবাল পয়েন্টে ভেঙে পড়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার ও বিদ্যুৎ খুঁটির উপর ঝাউগাছ, ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আশপাশের এলাকা।
কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০-এর দশক থেকে প্রায় ৩০০ হেক্টর জুড়ে সাড়ে সাত লক্ষাধিক ঝাউগাছ রোপণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের প্রবল তোড়ে সেগুলো একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের অভিমত—আধুনিক এবং দীর্ঘমেয়াদি বাঁধ ছাড়া উপকূল রক্ষা করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়, তবে তা স্থায়ী সমাধান নয়। আধুনিক বাঁধ নির্মাণ ছাড়া উপকূল রক্ষা অসম্ভব।”
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ভারী বর্ষণ এবং পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, “প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না, তবে ক্ষতিরোধে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি।”
উপকূলীয় এলাকার এমন পরিস্থিতি শুধু পর্যটনখাত নয়, সামগ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যও হুমকিস্বরূপ। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবিলম্বে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।