বন্ধুত্বের আড়ালে প্রতারণা! চিকিৎসক ডা. রাশেদ নিজাম অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুই বন্ধু ম্যানেজার মতিউর রহমান রকি ও হিসাবরক্ষক ইলিয়াছ হোসেন পরিকল্পিতভাবে তাঁর নামে ভুয়া চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন।
ঘটনাটি রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি চুরির মামলার মাধ্যমে আলোচনায় আসে। ডা. রাশেদ দাবি করেন, তাঁরা তিনজন একসাথে নোয়াখালীর রামগঞ্জে পড়াশোনা করতেন, এবং পরবর্তীতে ঢাকায় ডেন্টাল চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির ব্যবসা শুরু করেন।
ডা. রাশেদ নিজামের অভিযোগ, ‘টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই’ প্রতিষ্ঠানে তাঁর অধীনে কাজ করতেন রকি ও ইলিয়াছ। পরবর্তীতে তারা ভুয়া ‘টিথ টেক ডেন্টাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে তাঁকে দ্বিতীয় অংশীদার এবং নিজেদের এমডি ও অংশীদার দেখিয়ে চুক্তিনামা বানান।
এই কাগজপত্র ব্যবহার করে ২৫ ফেব্রুয়ারি কাফরুল থানায় রকি একটি চুরির মামলা করেন, যাতে অভিযোগ করা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ডা. রাশেদ নিজাম ২ কোটি টাকার চীন থেকে আমদানিকৃত ডেন্টাল সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেছেন।
ডা. রাশেদ নিজামকে ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় রামগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেন এসআই শরীফুজ্জামান। তাঁর দাবি, মোবাইল সিডিআর ট্র্যাকিং করে লোকেশন শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। চার দিন পর জামিনে মুক্তি পান রাশেদ নিজাম।
এসআই শরীফুজ্জামান বলেন, “আমরা বাদীর দেওয়া চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছি। চুরি হওয়া মালামালের বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে, তাই চার্জশিট দিয়েছি। ব্যাংক হিসাব বা বিনিয়োগের বিবরণ আমাদের প্রয়োজনীয় নয়।”
ডা. রাশেদ বলেন, “রকি ও ইলিয়াসকে আমি কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছিলাম। চীন থেকে আনা ১ কোটি টাকার পণ্য শেরেবাংলানগর থানা এলাকার রাস্তায় থেকে ওরা আমার রিকশা আটকিয়ে পিকআপে তুলে নিয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “হিসাব গরমিল ধরা পড়ায় জানুয়ারিতে আমি ওদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করি। এরপর পরিকল্পিতভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কাগজ তৈরি করে তারা মামলা করে আমাকে হয়রানি করে।”
মামলার বাদী রকি বলেন, “রাশেদ আমাদের হিসাব দিতেন না, কর দিতেন না। নভেম্বর মাসে আমরা তিনজন মিলে চুক্তিনামা করি। স্টকের মাল রাশেদ নিজেই অফিস থেকে নিয়ে গেছে, সিসিটিভি ফুটেজ আছে। ডেন্টাল এসোসিয়েশন সালিশে ৬০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল, সেটাও মানেননি। এজন্য তাঁর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে।”
মাত্র দুই মাসে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ, ২ কোটি টাকার আমদানি এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঘিরে তৈরি হওয়া এই জটিল ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে প্রকৃত সত্য কী—তা এখন নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর। একপক্ষ বলছে প্রতারণা, অন্যপক্ষ বলছে প্রতিহিংসামূলক মামলা।