পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের মানুষের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম এখনো ডিঙি নৌকা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এই ইউনিয়নটি নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এবং প্রায় সারা বছরই বড় একটি অংশ জলাবদ্ধ থাকে। ফলে সড়কপথে চলাচল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, আর স্থানীয়দের জীবনের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে ছোট্ট ডিঙি নৌকা।
খালের দুই পাশ ঘেঁষে গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পানি পথই এখানকার মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া, কৃষকদের হাটে পণ্য আনা-নেওয়া কিংবা অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছানো—সবকিছুতেই নির্ভর করতে হয় এই নৌপথের ওপর।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিছু মৌসুমি সাঁকো বা মাটির রাস্তা থাকলেও তা বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও নারী যাত্রীদের জন্য চরম দুর্ভোগ ও ঝুঁকি তৈরি হয়।
দেউলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে রয়েছে সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিলডুমরিয়া গ্রামে রয়েছে ডুমরিয়া নেছারিয়া বালিকা ও বালক আলিম মাদ্রাসা, এছাড়া আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ও এখানে অবস্থিত। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কোনো উপযুক্ত রাস্তা না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শীতকালে নদী ও খালগুলো কচুরিপানায় এমনভাবে আটকে যায় যে নৌকাতেও যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মোঃ নাঈম হাওলাদার বলেন, “আমাগো বিলে জন্ম, বার মাস ডিঙি নৌকা ব্যবহার করতে হয়। ডিঙি নৌকাই আমাগো রাস্তা।”
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আয়ুব আলী তালুকদার জানান, “শৈশব থেকে দেখে আসছি যাতায়াতের কষ্ট। বাজার, শিক্ষা বা চিকিৎসা—সবকিছুর জন্য পাড়ি দিতে হয় অথৈ জল। আমাদের জীবন নির্ভর করে ছোট্ট ডিঙি নৌকার ওপর।”
সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, “এখানে শিক্ষার্থীদের নৌকা ট্রলার ছাড়া বিদ্যালয়ে যাতায়াতের অন্য কোনো উপায় নেই। সরকার যদি স্থায়ী রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগ নেয়, তবে শিক্ষা ও উন্নয়ন দুটোই এগিয়ে যাবে।”
ডুমরিয়া নেছারিয়া বালক আলিম মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বায়জিদ জানায়, “রাস্তাঘাট না থাকায় আমাদের প্রতিদিন নৌকায় চড়ে মাদ্রাসায় যেতে হয়। এটি খুব কষ্টকর। যদি রাস্তা তৈরি হতো, তাহলে আমরা নির্বিঘ্নে পড়তে যেতে পারতাম।”
দেউলবাড়ীর সাধারণ মানুষ চান, তাদের গ্রামে যেন স্থায়ী সড়কপথ ও সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে পানিপথের ওপর নির্ভরতা কমে এবং যোগাযোগ সহজ ও নিরাপদ হয়।
এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া শাহনাজ তমা বলেন, “আমাদের যদি সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।”
দেউলবাড়ীর মানুষের আশা, সরকার দ্রুত এই অঞ্চলে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেবে—যাতে ডিঙি নৌকাভিত্তিক দুর্ভোগের দিন শেষ হয় এবং নতুন প্রজন্ম শিক্ষা ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।