ঈদুল আজহা সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহে আবারও চাঙ্গা হয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার। চলতি জুন মাসের প্রথম ৩ দিনেই দেশে এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রবাসী আয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা (ডলারপ্রতি ১২৩ টাকা ধরে)। ব্যাংকাররা বলছেন, এই রেমিট্যান্স প্রবাহে ডলারের সংকট অনেকটাই কেটে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত (১১ মাসে) প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ২৮.১১ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ২১.৬৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৪৬ বিলিয়ন ডলার।
গত মে মাসেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১.৭ শতাংশ বেশি। মার্চ মাসে রোজার ঈদ উপলক্ষে এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার, যদিও এপ্রিলে কিছুটা কমে তা দাঁড়িয়েছিল ২৭৫ কোটি ডলারে।
প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক এই প্রবাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.০৬ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর মানদণ্ড অনুযায়ী (BPM6), বর্তমান রিজার্ভ ২০.৭৬ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই প্রবৃদ্ধি দেশের ডলার সংকট কাটাতে এবং মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হচ্ছে। একই সঙ্গে ডলারের দামের ওপর চাপও কমছে। এখন ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দরে রেমিট্যান্স কিনছে, যদিও খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২৫ টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয় হলো দেশের একমাত্র দায়বিহীন বৈদেশিক মুদ্রা উৎস। কারণ, এর বিপরীতে কোনো পণ্য আমদানি করতে হয় না, বা বিদেশি ঋণ পরিশোধের দায় থাকে না। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে আমদানি ব্যয় থাকায় ডলার খরচ হয়।
সরকারি প্রণোদনা, হুন্ডি বা অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং ধর্মীয় উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা—সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদুল আজহার মতো বড় উৎসব সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন, যাতে পরিবারের সদস্যরা দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারেন। ব্যাংকারদের আশা, জুন মাসজুড়ে প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ আরও বাড়বে।