বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা শাহিনুর বেগম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার জামিন পাননি। শনিবার (২১ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ২০ জুন সন্ধ্যায় বেইলি রোডের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তিনি মামলার এজাহারনামীয় ২৬ নম্বর আসামি। আদালতে হাজির করার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক কাজী রমজানুল হক, ইকবাল বাহারকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহিন ও সপ্না খানম আদালতে জামিন চেয়ে বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি একজন অসুস্থ ব্যক্তি ও পুলিশের সাবেক আইজিপি। তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
তারা যুক্তি দেন, “একই মামলায় সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং নায়িকা নুসরাত ফারিয়া জামিন পেয়েছেন। তাই যেকোনো শর্তে জামিন প্রার্থনা করছি।” তবে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০২৩ সালের ৫ জুন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা আরোপ নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “রাজাকারের বাচ্চা” মন্তব্যে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে।
২২ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা ফুটওভারব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে, শাহিনুর বেগম খাবার পানি সরবরাহ করছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, আন্দোলন দমন করতে আসামিদের নির্দেশে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ করা হয়। এ সময় শাহিনুর বেগম মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এই ঘটনায় নিহতের মেয়ে হাবেজা আক্তার (৩৪) বাদী হয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯৭ জনের নামে মামলা করেন। একই মামলায় গ্রেপ্তারের পর সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া জামিন পান। তবে ইকবাল বাহারের জামিন না মঞ্জুর হওয়ায় রাজনৈতিক ও আইন অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে করা শাহিনুর বেগম হত্যা মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার ও জামিন বাতিল একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এটি দেশের আইনি কাঠামো ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন মোড় সৃষ্টি করেছে।