বাংলাদেশের চলমান পুলিশ সংস্কার প্রচেষ্টা ও গণশাসন জোরদারের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আয়ারল্যান্ড। দেশটি জানিয়েছে, তারা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায়, বিশেষ করে সংঘাত-পরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বাস্তবায়নে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আয়ারল্যান্ডের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম পুলিশ অমবোডসম্যান ব্যারোনেস নুয়ালা ও’লোন। এ সময় তারা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী শাসন ব্যবস্থায় দায়িত্বশীলতা ও মানবাধিকারভিত্তিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জানান।
দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যারোনেস ও’লোন ১৯৯৮ সালের ঐতিহাসিক ‘গুড ফ্রাইডে চুক্তি’-পরবর্তী সময়ে সাত বছর উত্তর আয়ারল্যান্ডের পুলিশ অমবোডসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় দীর্ঘ সংঘাতের অবসানের পর আস্থা ও জবাবদিহিতার নতুন কাঠামো তৈরি হয়।
তিনি বলেন, “আয়ারল্যান্ডের সংঘাত-পরবর্তী অভিজ্ঞতা, ধৈর্য, অংশগ্রহণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাস্তব শিক্ষা দেয়। আমরা এখানে এসেছি টেকসই পরিবর্তনের বাস্তবসম্মত সময়সীমা নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করতে।”
বৈঠকে আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ইউনিটের পরিচালক ফিয়োনুলা গিলসেনান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বৈঠকে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আয়ারল্যান্ডের প্রস্তাবকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় দেশটির ক্রমাগত সহযোগিতার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও দায়বদ্ধ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আয়ারল্যান্ডের সহায়তাকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করি।”
এ সময় তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধে আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলির সহযোগিতাও কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি বাংলাদেশের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড উভয় দেশই শান্তি, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অটল। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য।”
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই সহযোগিতা বাংলাদেশের পুলিশ সংস্কার, মানবাধিকার রক্ষা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।