সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ইরান হারিয়েছে ১ হাজার ৬২ জন মানুষকে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন দেশটির সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজারানি।
সরকারি তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৭৮৬ জন ছিলেন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ২৭৬ জন ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১০২ জন নারী ও ৩৮ জন শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে পাঁচজন প্যারামেডিক, পাঁচজন নার্স ও সাতজন জরুরি সেবাকর্মীও ছিলেন।
বেসামরিক হতাহতের মধ্যে ৩৪ জন শিক্ষার্থী এবং পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। মোহাজারানি বলেন, “একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও একাডেমিক কর্মীও নিহত হয়েছেন। তবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।”
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে তেহরান প্রদেশে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬৫ জন। যুদ্ধের ফলে বেসামরিক অবকাঠামোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের ১৬টি প্রদেশে অন্তত ৩৬টি স্কুল, ২১৯টি শিল্প ইউনিট, সাতটি হাসপাতাল ও ১১টি অ্যাম্বুলেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৮ হাজার আবাসিক ইউনিট ও ২২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাড়িও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
যুদ্ধকালীন সময়ে ২৩০টি স্কুল অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয় এবং ৫৬টি স্কুল বাস্তুচ্যুতদের জন্য ব্যবহৃত হয়। মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএএনএর মতে, মোট হতাহতের সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৫ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ১৯০ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে ৭৫ জন বন্দী পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে এখনও ২৭ জন পলাতক রয়েছেন। বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর জানান, পালাতকদের অধিকাংশই হালকা অপরাধে আটক ছিলেন।
ইসরায়েলের ২৩ জুনের হামলায় কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়। নিহত হন কারাগারের প্রধান কৌঁসুলি আলী ঘানাতকার, কর্মকর্তা রুহুল্লাহ তাওয়াসলি, মেডিকেল কর্মী, দর্শনার্থী ও অন্তত এক শিশু।
মোহাজারানি এই হামলাকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এভিন কারাগারে হামলাটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।” ইরান ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।